বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা বেঁধে দেওয়ার পরও সাড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হালি ৫০ টাকা। আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা বেঁধে দেওয়ার পরও সাড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হালি ৫০ টাকা। আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে

ঢাকার তিন কাঁচাবাজার

বেঁধে দেওয়া দামে এখনো বিক্রি হচ্ছে না ডিম, পেঁয়াজ ও আলু

বাজার লাগাম টানতে তিনটি পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ, ডিম ও আলু—এই তিন পণ্যের দাম ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যদিও আজ শুক্রবার সকালে ঢাকার কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের টাউন হল এবং রায়েরবাজার—এই তিন কাঁচাবাজারের কোনোটিতেই সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য তিনটি বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

প্রথম আলোর দুজন প্রতিবেদক এই তিন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখেন, দাম বেঁধে দেওয়ার একদিন পর আজ দেশি পেঁয়াজ, ডিম ও আলু আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। ফলে তাঁদের পক্ষে এখনই সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা শীর্ষক বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তিন পণ্যের বেঁধে দেওয়া দাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এখন থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা।

গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যও রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন ন্যায্য দাম কার্যকর করব।’

প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তার মানে সরকারের বেঁধে দেওয়ার দামের তুলনায় কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা বেশি। আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কিচেন মার্কেটের সামনের সড়কে কয়েকজন ৩ জন ডিম বিক্রেতা ৫০ টাকা হালি দরে ফার্মের ডিম বিক্রি করছেন। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম হচ্ছে ৪৮ টাকা।

সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করছেন না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে রাসেল হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বললেন, গতকাল বৃহস্পতিবার আড়ত থেকে ১০০ পিছ ডিম কিনেছি ১ হাজার ১৬০ টাকা দরে। তার সঙ্গে ২০ টাকা যোগ করেন ভ্যানভাড়া। আবার ১০০ ডিমে গড়ে ৩টি ভাঙা থাকে। এখানে লোকসান হয় ৩০ টাকা। তাতে ১০০ ডিমের দাম গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২১০ টাকায়। তার মানে একেকটা ডিমের দাম ১২ টাকা ১০ পয়সা। তাহলে কীভাবে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করব।

রাসেল হোসেন জানালেন, আজ শুক্রবার আড়তে খোঁজ নিয়েছিলাম। ডিমের দাম কমেনি। তিনি বলেন, আড়তে দাম বেশি থাকার পরও যদি আমাদের ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করতে বাধ্য করে তাহলে কাল থেকে দোকান বন্ধ করে দেব।

ডিমের পর আলু ও দেশীয় পেঁয়াজ খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আলুর কেজি ৪৫ টাকা। তার মানে কারওয়ান বাজারেই সরকারের বেঁধে দেওয়ার দামের তুলনায় দেশি পেঁয়াজ ১০-১৫ টাকা এবং আলু ৯ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

দীর্ঘদিন ধরে কারওয়ান বাজারে আলু, পেঁয়াজ ও রসুন বিক্রি করেন আবদুল হামিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকালে পাইকারি বাজার থেকে আলু ৩৯ টাকা এবং পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজি দরে কিনেছি। সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কিনতে না পালে সরকারের দামে বেচব কেমনে।

এদিকে সকাল ১০টার দিকে রায়েরবাজার কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মের ডিমের হালি ৫০, আলু ৪৫-৫০ এবং দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

টাউন হলের বিক্রেতা মো. শাহাদত একটি রসিদ দেখিয়ে বললেন, বেড়িবাঁধ এলাকার সাদেক খান কৃষি মার্কেট থেকে আজ সকালে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৬ টাকা দরে কিনেছি। বিক্রি করছি ৮০ টাকায়। কমদামে কিনতে পারলে তো সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করতে পারব।

বেলা ১১টার দিকে টাউন হল কাঁচাবাজারে গিয়ে ডিমের দাম একই অর্থাৎ ৫০ টাকা হালিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। আলুর কেজি ৪৫-৫০ টাকা আর দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০-৯০ টাকা। তার মানে তিনটি পণ্যই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বললেন, গতকালও একই দাম ছিল।

সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি কেন করছেন এমন প্রশ্ন করলে রায়েরবাজারের মো. জালাল নামে একজন বিক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার যদি কিনে দেয় তাইলে আমাগো বেঁচতে সমস্যা কোথায়।...’