চার ক্ষেত্রে দক্ষতার ঘাটতি নিয়ে চলছে তৈরি পোশাক কারখানা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

তৈরি পোশাক কারখানায় মোটাদাগে চারটি জায়গায় কর্মীদের মধ্যে দক্ষতার ঘাটতি আছে। সেগুলো হলো, সেলাই মেশিন অপারেটর, মান পরিদর্শক ও নিয়ন্ত্রক, প্রিন্টিং মেশিন অপারেটর ও এমব্রয়ডারি মেশিন অপারেটর। এই চার শ্রেণিতে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশের মতো দক্ষতার ঘাটতি আছে।

আজ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলনের সকালের প্রথম অধিবেশনে তৈরি পোশাক খাতের দক্ষতার ঘাটতি নিয়ে পরিচালিত গবেষণার ওপর উপস্থাপনায় এ কথা বলা হয়। গবেষণায় পাওয়া তথ্য উপস্থাপনা করেন বিআইডিএস গবেষক রিজওয়ানা ইসলাম।

রিজওয়ানা ইসলাম ১১৯টি নিট ও ওভেন কারখানার ওপর গবেষণাটি করেছেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন পর্যায়ে তুলনামূলক দক্ষতার ঘাটতি কম, কিন্তু ব্যবস্থাপক পর্যায়ে ঘাটতি বেশি। পোশাক কারখানামালিকেরা যে ধরনের কর্মী চান, সেই ধরনের লোক পাওয়া যায় না। গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, পোশাক খাতে কর্ম খালি হলে এক সপ্তাহের মধ্যে তিন–চতুর্থাংশ কারখানায় তা পূরণ হয়ে যায়, কিন্তু দক্ষ কর্মী পাওয়া কঠিন।

সকালের অধিবেশনে বিভিন্ন খাতে দক্ষতার ঘাটতি নিয়ে আলোচনা হয়। গুলশানের এক হোটেলে অনুষ্ঠিত সেই অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট কর্মসূচির উপনির্বাহী প্রকল্প পরিচালক সানোয়ার জাহান চৌধুরী।

বিশেষ আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক শুভাশীষ বড়ুয়া বলেন, পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে যে মজুরি দেওয়া হয়, তা সংসার চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই একজন কর্মী দীর্ঘদিন এক প্রতিষ্ঠানে থাকেন না। মজুরি বাড়ানোর পাশাপাশি যদি স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা দেওয়া যেত, তাহলে কর্মীরা দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে থাকতেন। তিনি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানের আরেক আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বলেন, বাজেটে যখন বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দেওয়া হয়, তখন প্রণোদনা পাওয়ার শর্ত হিসেবে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি জুড়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা দক্ষতার ঘাটতি পূরণে বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।

আজ সকালের অধিবেশনে আরও তিনটি গবেষণার ওপর উপস্থাপনা করা হয়। এর একটি হলো হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিক খাত। সেখানে বলা হয়েছে, এই দুই ধরনের শিল্পে কর্মরত চার ভাগের তিন ভাগ শ্রমিকের কাজের সঙ্গে পড়াশোনার মিল নেই। প্রায় ৭৬ শতাংশ শ্রমিকের এই অবস্থা। আর ৭৪ শতাংশ শ্রমিকের নির্দিষ্ট ডিগ্রি নেই।

হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিক—এই দুই খাতের ওপর গবেষণা করেন বিআইডিএস গবেষক কাজী ইকবাল ও মারুফ আহমেদ। কাজী ইকবাল এই বিষয়ে বলেন, দক্ষতার অভাব আছে এই খাতে, ঘাটতি পূরণে প্রকৃত শিক্ষায় নজর দিতে হবে।

বিআইডিএসের আরেক গবেষক হারুনুর রশিদ চামড়া ও পাদুকা খাত নিয়ে একটি গবেষণা উপস্থাপনা করেন। তাতে তিনি বলেন, এই খাতের ৫০ শতাংশের বেশি কর্মী জানিয়েছেন, তাঁরা দক্ষতার অভাব বোধ করেন। একজন কর্মীকে এই খাতে কিছুটা দক্ষ করে প্রস্তুত করতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগে। এই খাতের নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শ্রমিকদের দক্ষতার প্রয়োজন।

অন্যদিকে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত নিয়ে গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষক কাশফি রায়ান। তিনি বলেন, এই খাতের ৪৭ শতাংশ শ্রমিকের দক্ষতার ঘাটতি আছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা উচ্চপদে নিয়োগ পান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের এ ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ কম। মধ্যম পর্যায়ে চাকরি পান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা।

কাশফি রায়ান আরও বলেন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজন। এই খাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত দেন এই গবেষক।