বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংক

আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৭%, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এরপর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। যদিও প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শুধু তা–ই নয়, সরকার মনে করছে, মধ্যমেয়াদে দেশের প্রবৃদ্ধির হার আরও বাড়বে।

বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। তাদের প্রাথমিক হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি কমবে। বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ শীর্ষক জুন মাসের প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ; ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ তাদের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের পর টানা দুই অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৬ শতাংশের নিচে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে আমদানি নিষেধাজ্ঞা থাকায় শিল্প–কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি কেনাকাটা ও বিনিয়োগের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একভাবে চলে যাচ্ছে, কিন্তু উচ্চমূল্যর কারণে মানুষের প্রকৃত মজুরি ও পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এতে ব্যক্তি মানুষকে ভোগের রাশ টানতে হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সরকার দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করায় ঋণের সুদহার বেড়েছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে; টান পড়ছে সমাজের চাহিদায়।

দেশের ব্যাংকিং খাতে যে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ তৈরি হয়েছে, তা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। মূল্যস্ফীতির হার কমে এলে ব্যক্তিপর্যায়ের ভোগ কিছুটা স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছে তারা। সেই সঙ্গে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগেও গতি আসবে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেসব বাধা আসতে পারে, বিশ্বব্যাংক সেগুলোতেও আলো ফেলেছে। তারা বলেছে, বিশ্বায়িত পৃথিবীতে এক দেশের সমস্যা কেবল সেই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অর্থাৎ বাংলাদেশের বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমলে তার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাংলাদেশও মুক্ত থাকবে না। যেমন চীন বাংলাদেশের আমদানির মূল উৎস। চীনের অর্থনীতি গতি হারালে মধ্যবর্তী পণ্য ও উপকরণ আমদানিতে প্রভাব পড়বে। আরেক দিকে বাংলাদেশের রপ্তানির মূল গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে প্রত্যাশিত চাহিদা না থাকলে রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ আরও কিছু ঝুঁকির কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক।

বৈশ্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, গত তিন বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতি এবারই প্রথম স্থিতিশীল হবে। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৬ শতাংশ আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে ভারতের—৬ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ও ভুটানের একই হারে অর্থাৎ ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে। এ ছাড়া নেপালের ৪ দশমিক ৬ ও পাকিস্তানের ২ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।