সোনাদানার আগাম কর দেওয়া যাবে

আগামী মাস থেকে প্রবাসী যাত্রীদের টিভি, ফ্রিজ, হোম থিয়েটার, সোনাসহ জিনিসপত্র আনার ক্ষেত্রে নতুন এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।

আগামী মাস থেকে প্রবাসী যাত্রীদের টিভি, ফ্রিজ, হোম থিয়েটার, সোনাসহ জিনিসপত্র আনার ক্ষেত্রে নতুন এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে ফেরার সময় সোনাদানা, টিভি, মুঠোফোন, হোম থিয়েটারসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আসেন। এ জন্য প্রায়ই বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে তাঁদের হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। বিধি অনুসারে শুল্ক পরিশোধ না করায় অনেক সময় শুল্ক কর্তৃপক্ষ দেশে ফেরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে মালামাল রেখে দেন। অনেকেই জানেন না, কত টাকা শুল্ক দিতে হবে। এবার এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে।

ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় যাত্রীরা বিদেশ থেকে ফেরার সময় সঙ্গে আনা মালামাল সম্পর্কে আগাম ঘোষণা দিতে পারবেন। আবার শুল্ক-করও পরিশোধ করা যাবে। একটু খোলাসা করে বলা যাক, প্রবাসীরা দেশে ফেরার সময় সোনার বার, টিভি, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসেন। এসব পণ্যের ওপর শুল্ক প্রযোজ্য। সে জন্য অনেকেই দেশের স্থল ও বিমানবন্দরে এসে বিপাকে পড়েন। কারণ, তখন অনেকের কাছে অর্থ থাকে না। আবার প্রতারক চক্রও শুল্ক–করের ভুয়া চালান ধরিয়ে দিয়ে টাকা নিয়ে সটকে পড়ে। তাই যাত্রীদের সুবিধার জন্য এখন দেশের ফেরার আগেই অনলাইনে ফরম পূরণ করে শুল্ক–কর পরিশোধের ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। এখন এনবিআরের শুল্ক বিভাগ এ নিয়ে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। বাংলাদেশ কাস্টমস অফিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে এই অনলাইন–ব্যবস্থা সক্রিয় থাকবে। বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর—দুই জায়গাতেই এই ব্যবস্থা চালু হবে।

শুধু অটোমেশন করলেই হবে না। এর ব্যবস্থাপনাও ঠিকমতো করতে হবে। একজন যাত্রী বিদেশ থেকে ঘোষণা দিয়ে জিনিসপত্র আনলেন, সে জন্য করও পরিশোধ করলেন; কিন্তু বিমানবন্দর বা স্থলবন্দরে এসে আবার ব্যাগ খুলে যদি শুল্ক কর্মকর্তারা তা যাচাই করেন, তাহলে কাজ হবে না।
আহসান এইচ মনসুর, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক

ব্যাগেজ রুলের আওতায় যা আনা যায়

ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত হয় এমন পণ্য আনতে ব্যাগেজ রুলের আওতায় শুল্ক দিতে হয় না। তবে ১২ ধরনের পণ্য আনতে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হয়। এগুলো হচ্ছে ২২ ইঞ্চির বড় প্লাজমা, এলসিডি, টিএফটি ও এলইডি টিভি; ৪ থেকে ৮টি স্পিকারসহ হোম থিয়েটার; রেফ্রিজারেটর বা ডিপ ফ্রিজার; সব ধরনের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি); ডিশ অ্যান্টেনা; স্বণ৴পিণ্ড বা স্বর্ণবার (সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম), রৌপ্যপিণ্ড বা রৌপ্যবার; ক্যামেরা; এয়ারগান বা এয়ার রাইফেল; ঝাড়বাতি; ১৫ বর্গমিটার পর্যন্ত কার্পেট; ডিশ ওয়াসার, ওয়াশিং মেশিন, ক্লথ ড্রায়ার।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, শুধু অটোমেশন করলেই হবে না। এর ব্যবস্থাপনাও ঠিকমতো করতে হবে। একজন যাত্রী বিদেশ থেকে ঘোষণা দিয়ে জিনিসপত্র আনলেন, সে জন্য করও পরিশোধ করলেন; কিন্তু বিমানবন্দর বা স্থলবন্দরে এসে আবার ব্যাগ খুলে যদি শুল্ক কর্মকর্তারা তা যাচাই করেন, তাহলে কাজ হবে না। এতে হয়রানি বাড়বে। ভালো উদ্যোগ নষ্ট হবে। তাই আগে শুল্ক কর্মকর্তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।

কীভাবে পরিশোধ করবেন

ধরুন, আপনি আরও এক সপ্তাহ পর দেশে ফিরবেন। আপনার ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছেন। একটি এলইডি টিভি, দুটি স্বর্ণবার আনছেন। বিমানবন্দরের ঝামেলা এড়াতে আপনি বিদেশে থেকেই এনবিআরের সিস্টেমে প্রবেশ করে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে এসব জিনিসপত্রের ঘোষণা দিতে পারবেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে করের পরিমাণও জানিয়ে দেবে এনবিআরের সিস্টেম। কার্ডের মাধ্যমে শুল্ক-কর পরিশোধ করতে পারবেন। তখন আপনার মেইলে আসা জমার ফরমের কপিটি প্রিন্ট করে নেবেন। দেশের স্থল বা বিমানবন্দরে নেমে শুল্ক কর্মকর্তাকে ওই কপিটি দেখাতে হবে। বারকোড দিয়ে এই শুল্ক কর্মকর্তা দেখে নেবেন। এভাবে মুহূর্তেই আপনার সব প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে।

শুধু জিনিসপত্র নয়; অনেকে নগদ বিদেশি মুদ্রাও দেশে ফেরার সময় আনেন। এতে শুল্ক-কর দিতে হয় না। আপনি যত খুশি বিদেশি মুদ্রা আনতে পারবেন। এ জন্য একইভাবে দেশে আসার আগেই অনলাইনে মুদ্রা আনার ঘোষণাও দিতে পারেন।

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন এনবিআরের প্রথম সচিব মো. নেয়ামুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই সুবিধায় একজন যাত্রীকে দেশের বিমানবন্দরে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। আগে থেকেই পণ্যের ঘোষণা ও শুল্ক পরিশোধ থাকায় শুধু ফরমটি দেখিয়ে কিংবা ই-মেইলে আসা ফিরতি মেইল দেখিয়ে বের হয়ে যাবেন। এতে সময় বাঁচবে।

বর্তমানে এক কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকেন। মধ্যপ্রাচ্যেই বেশি বাংলাদেশি কর্মী কাজ করেন। তাঁরা দেশে ফেরার সময় আত্মীয়স্বজনদের জন্য নানা ধরনের উপহারসামগ্রী আনেন।