মেলার প্রথম পাঁচ দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থী তেমন আসেননি। তবে পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবারে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়।
দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটিতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) বেশ জমে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) চলমান এ মেলায় শুক্র ও শনিবার দুই দিনই তীব্র শীত উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা–দর্শনার্থী বেজায় ভিড় করেছেন। এতে বিক্রি বেশ বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতাদের অনেকেই দাবি করেছেন, এবার পণ্যের দাম কিছুটা বেশি।
শুরু থেকেই ক্রেতাশূন্যতায় ভুগছিল দ্বিতীয়বারের মতো পূর্বাচলে আয়োজিত এই বাণিজ্য মেলায়। এটি ডিআইটিএফের ২৭তম আসর। পঞ্চম দিন পর্যন্ত মেলার বেশ কিছু দোকান ছিল অপ্রস্তুত। গতকাল শনিবার বিকেলে মেলা ঘুরে দেখা গেল, বিক্রেতাদের নানা হাঁকডাক ও ক্রেতাদের সরব পদচারণে সরগরম হয়ে উঠেছে চারদিক।
যেসব স্টল–প্যাভিলিয়নের নির্মাণকাজ এত দিন অসমাপ্ত ছিল, তারাও প্রস্তুতি সেরে ফেলে ক্রেতাদের ডাকছে। তাদের কেনাবেচাও ভালো। মেলায় অবশ্য নারী ও শিশুদের উপস্থিতিই ছিল চোখে পড়ার মতো। খাবারের দোকান, বিদেশি শাল–চাদর, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নিত্যসামগ্রীর স্টল–প্যাভিলিয়নগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়।
‘শীতের কারণে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এত শীতের মধ্যেও ক্রেতাদের মেলায় আসাটা ইতিবাচক। দুই দিন ধরে বাণিজ্য মেলা পুরোপুরি জমে উঠেছে।’নাজনীন আক্তার, জয়িতা ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় ব্যবসায়ী আব্দুল কাইয়ুমের সঙ্গে। কাশ্মীরি আচার নিয়ে মেলায় এসেছেন তিনি। শুক্রবারের পর গতকাল শনিবারও প্রত্যাশিত ক্রেতা পেয়েছেন বলে জানালেন। শীতের তীব্রতা কমে গেলে সপ্তাহের অন্য দিনগুলোয়ও ক্রেতাদের ভিড় থাকবে বলে আশাবাদী তিনি।
শৈত্যপ্রবাহ ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভালোই বেকায়দায় ফেলেছে বলে মনে করেন জয়িতা ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা নাজনীন আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শীতের কারণে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এত শীতের মধ্যেও ক্রেতাদের মেলায় আসাটা ইতিবাচক। দুই দিন ধরে বাণিজ্য মেলা পুরোপুরি জমে উঠেছে।’ এই উদ্যোক্তা জানান, গতবার মেলার বি ব্লকে অন্যান্য কাপড়ের দোকানের সঙ্গে জয়িতা ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়েছিল। এ বছর এ ব্লকে ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নের সঙ্গে তাঁদের প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে তাঁদের প্যাভিলিয়নে ক্রেতারা কিছুটা কম ভিড়ছে।
ক্রেতাসমাগম বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেল মেলার টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান আবদুল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাসুম চৌধুরী সঙ্গে কথা বলে। প্রথম আলোকে তিনি জানান, মেলা শুরুর প্রথম পাঁচ দিনে যেখানে মোট ৫৯ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল, সেখানে শুক্রবারই ক্রেতাসমাগম হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার। শনিবার দুপুর পর্যন্ত ক্রেতা কম থাকলেও বিকেল নাগাদ ক্রেতা–দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে। ফলে শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।
‘শুক্র ও শনিবার দূরদূরান্তের ক্রেতা–দর্শনার্থীরা মেলায় বেশি এসেছেন। সব মিলিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’ইফতেখার আহমেদ, মেলার পরিচালক
মেলায় অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিলের একটি স্টলে কথা হয় শিক্ষার্থী আফসানা আক্তারের সঙ্গে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে মেলায় এসেছেন জানিয়ে বলেন, বাসায় গ্যাস–সংকটের কারণে বিদ্যুৎ–চালিত চুলা (ইনডাকশন) কিনতে এসেছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের তুলনায় মেলায় চুলার দাম বেশি বলে মনে হয়েছে তাঁর। তাই চুলা না কিনে মূল্যছাড়ে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি–পাতিল কেনার কথা ভাবছেন তিনি।
একই কথা বললেন নরসিংদীর শিবপুর থেকে মেলায় আসা শিক্ষার্থী রহমত উল্লাহ ও তাঁর বন্ধুরা। রহমত উল্লাহ জানান, শনিবার দুপুরে একটি মাদ্রাসা থেকে তাঁরা সাত বন্ধু মেলায় ঘুরতে এসেছেন।
মেলার ভেতরের হোটেলগুলোয় দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে দেখেন জনপ্রতি ২২০ টাকার নিচে কোনো খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে মেলার বাইরে থেকে খাবার কিনে আবার টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করেছেন তাঁরা। খাবার ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামও তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে রহমত উল্লাহ ও তাঁর বন্ধুদের।
তবে পণ্যের দাম বেশি রাখার অভিযোগ মানতে নারাজ দেশের একটি খ্যাতনামা গ্রুপ অব কোম্পানির প্যাভিলিয়নের দায়িত্বে থাকা এহতেশাম মনির। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মেলার পজেশনভাড়া, প্যাভিলিয়ন তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের পর মুনাফা করতে যে পরিমাণ বিক্রি প্রয়োজন, প্রথম পাঁচ দিনের গড় বিক্রি তার চেয়ে অনেক কম। ফলে আমরা এখনো ছাড় দিচ্ছি না। সে কারণে অনেকের দাম বেশি মনে হতে পারে।’
জানতে চাইলে মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার দূরদূরান্তের ক্রেতা–দর্শনার্থীরা মেলায় বেশি এসেছেন। সব মিলিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে (বিবিসিএফইসি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন। এতে দেশ-বিদেশের ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনিপ্যাভিলিয়ন রয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১২৬টি বেশি।
এবারের মেলায় সিঙ্গাপুর, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১০টি দেশের ব্যবসায়ীরা ১৭টি স্টলে তাঁদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন। মেলার প্রবেশ ফি বড়দের জন্য ৪০ টাকা, আর শিশুদের জন্য ২০ টাকা।