বিআইডিএসের দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ অন্যরা। আজ ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে
বিআইডিএসের দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ অন্যরা। আজ ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে

ঢাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশই ‘নতুন দরিদ্র’: বিআইডিএস

করোনা মহামারির সময় দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। পরে সেটি কমে আসে। তবে করোনার কারণে ঢাকায় নতুন দারিদ্র্যের আবির্ভাব ঘটেছে। গত বছর এই শহরের মোট দরিদ্রের ৫১ শতাংশই ছিল নতুন দরিদ্র।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক ২০২৩ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।

বিআইডিএসের দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন। আজ ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার।

বিনায়ক সেন বলেন, ‘ঢাকার মোট দরিদ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন দরিদ্র। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছে। সংকটে থাকা এই শ্রেণির ওপর আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, করোনা–পরবর্তী সময় দারিদ্র্য কমাতে আত্মকর্মসংস্থান বড় ভূমিকা রেখেছে। যাঁদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তাঁরা সেটি ভেঙে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তা ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস আত্মীকরণ দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে।

বিআইডিএসের দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আজ ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে

ঢাকার ২ হাজার ৪৬টি খানার ওপর জরিপ করে বিআইডিএস এই গবেষণা করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, করোনার আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে দরিদ্র খানার আয়ের ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ এসেছে আত্মকর্মসংস্থান থেকে। গত বছর সেটি বেড়ে ৩৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৯ সালে দরিদ্র খানা বা পরিবারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করত। করোনার পর অর্থাৎ ২০২২ সালে সেটি বেড়ে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ হয়েছে। যদিও তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। করোনার আগে ৩২ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবারের ব্যাংক হিসাব ছিল। পরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

অন্যদিকে অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে এমএফএস ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে। ২০১৯ সালে এসব পরিবারের মধ্যে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এমএফএস ব্যবহার করত। করোনার পর সেটি বেড়ে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ হয়েছে। এই ধরনের অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রবণতা বাড়েনি।

বিনায়ক সেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, করোনাকালে ঢাকার অনেক শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে সেই প্রবণতা বেশি। শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা অল্প বিধায় এই জায়গায় বেশি নজর দিতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সম্পদ যখন সৃষ্টি হয় তখন বৈষম্য অবধারিত। বৈষম্য প্রশমনে আমরা কাজ করছি। তারই অংশ হিসেবে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার মতো ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা কাজ না করেও ভাতা পাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমতাভিত্তিক সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে বৈষম্য কমানো সম্ভব। আমরা সেটিই করার চেষ্টা করছি।’