২০২১ সালে বাংলাদেশ এই ব্যাংকের সদস্য হয়। ব্যাংকটি বাংলাদেশকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের একটি প্রকল্পে সাড়ে ৩২ কোটি ডলার দিতে যাচ্ছে।
পাঁচটি বিকাশমান অর্থনীতির জোট ব্রিকসের উদ্যোগে গঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) থেকে এই প্রথমবারের মতো ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ব্যাংকটি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের একটি প্রকল্পে সাড়ে ৩২ কোটি ডলার দেবে, যা ডলারের বর্তমান বাজারদরে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, এই ঋণপ্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিগগিরই এনডিবির বোর্ড সভায় উঠবে। অনুমোদন হলে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) পরে নতুন আরেকটি বহুজাতিক ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ পাবে বাংলাদেশ।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নামের আদ্যক্ষর নিয়ে জোটটির নামকরণ হয়েছে ব্রিকস। এই জোটের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) গঠিত হয়। শুরুতে ওই পাঁচ দেশই এনডিবির সদস্য ছিল। পরে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ এই ব্যাংকের সদস্য হয়। এ ছাড়া সদস্য হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও মিসর। সব মিলিয়ে ব্যাংকটির সদস্যসংখ্যা এখন আট। লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে নতুন সদস্য হওয়ার পথে। গত আগস্টে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, আরও ছয় দেশকে জোটের সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এনডিবি সদস্য হওয়ার দুই বছরের মাথায় প্রথমবারের মতো ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারি কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী মাসের মধ্যেই ঋণ অনুমোদন করা হবে। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)—এই চার বহুপক্ষীয় ঋণদাতা ব্যাংকের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিবছর ঋণ নেয় বাংলাদেশ।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা পানি সরবরাহ প্রকল্পে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছ থেকে ৩২ কোটি ডলার ঋণ নিতে পারবে বাংলাদেশ। এই প্রকল্পের মোট খরচ ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা। ঢাকা ওয়াসা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। গত ২৯ আগস্ট এই প্রকল্পের ধারণাটি অনুমোদন করেছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। এখন ঋণপ্রস্তাবটি এনডিবি বোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষায়। ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, এই ঋণের সুদের হার দুই থেকে আড়াই শতাংশের মধ্যে থাকবে।
এই ব্যাংকের ঋণকে স্বাগত জানানো উচিত। এতে বিদেশি ঋণের উৎসে বৈচিত্র্য আসবে। এটি দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ভালো উদাহরণ। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলে আসছি। কারণ, আমাদের বিদেশি ঋণের চাহিদা আছে।সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম
জানা গেছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৬টি ইউনিয়নে পানি সরবরাহ–ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। গ্রাহকদের জন্য নতুন লাইন বসিয়ে পানির সংযোগ দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির মাধ্যমে পানির সরবরাহে ৭০ হাজার নতুন সংযোগ দেওয়া হবে।
ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, ঋণ নেওয়ার নতুন আরেকটি উৎস হলো নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। এই ব্যাংকের ঋণে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই চূড়ান্ত হবে।
নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে বাংলাদেশের জন্য ১০০ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ আরও কিছু প্রকল্পে এই ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চিন্তা করছে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণের বিষয়টি দেখভাল করার জন্য ইআরডিতে একটি নতুন শাখা খোলা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এই শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর ইআরডি সচিব শরিফা খান নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থে নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। যেমন যশোর, পাবনা, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প। এই প্রকল্প ভারতীয় গুচ্ছঋণে (লাইন অব ক্রেডিট বা এলওসি) বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল। গুচ্ছঋণের আওতায় এই প্রকল্পে ১৮ কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় ২০২১ সালের ২২ জুন এলওসির প্রকল্পের তালিকা থেকে এটি বাদ দেওয়া হয়। এখন প্রকল্পটি নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পও আলোচনায় আছে।
নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ব্যাংকের ঋণকে স্বাগত জানানো উচিত। কারণ, এতে বিদেশি ঋণের উৎসে বৈচিত্র্য আসবে। এটি দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার ভালো উদাহরণ। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলে আসছি। কারণ, আমাদের বিদেশি ঋণের চাহিদা আছে।’
সেলিম রায়হান আরও বলেন, ঋণের অর্থ যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার হয় এবং এর কোনো অপচয় না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।