২০২০–২১ অর্থবছরে ৪৯৭ প্রতিষ্ঠানে গবেষক ছিলেন ১৮ হাজার ২৫ জন
এর মধ্যে পূর্ণকালীন গবেষক ১২ হাজার ৭৯৮ জন
কৃষিবিজ্ঞানের গবেষণায় সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হয়
দেশে গবেষণা ও মান উন্নয়নে খরচ বাড়াতে অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছেন। সরকারও বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছে। তবে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশের জিডিপির তুলনায় মাথাপিছু গবেষণা ব্যয় এখনো অনেকটা তলানিতে রয়েছে।
বিবিএসের হিসাবে, দেশে গবেষণা ও মান উন্নয়ন কার্যক্রমে বছরে মাথাপিছু আনুমানিক ব্যয় (জিইআরডি) প্রায় ৬২০ টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় এই ব্যয় মাত্র শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক চাহিদার কথা চিন্তা করেই গবেষণা ও উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তা না হলে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা বেশ পিছিয়ে থাকব।
জরিপের তথ্য বলছে, দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে গবেষক আছেন ১০৭ জন। আর নারী গবেষকের সংখ্যাও সন্তোষজনক নয়।
সম্প্রতি বিবিএস গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) জরিপ ২০২২ প্রকাশ করেছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে গবেষক আছেন ১০৭ জন। আর নারী গবেষকের সংখ্যাও সন্তোষজনক নয়। মোট গবেষকের মধ্যে মাত্র ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ নারী।
জিইআরডি দিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে একটি দেশের ব্যয় করা মোট অর্থকে বোঝায়। গবেষণা ও উন্নয়নে একটি দেশের আগ্রহ, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে দেশের সামগ্রিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক এটি।
আরঅ্যান্ডডি জরিপে ২০২০–২১ ও তার আগের দুই অর্থবছরের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। চারটি খাতের সরকারি–বেসরকারি ৪৯৭টি প্রতিষ্ঠানের তথ্যের ভিত্তিতে এ জরিপ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১০৮টি, সরকারি প্রতিষ্ঠান ৯৫টি, বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ৪১টি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৫৩টি।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০–২১ অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানে মোট গবেষক ছিলেন ১৮ হাজার ২৫ জন। তবে পূর্ণকালীন গবেষকের সংখ্যা আরও কম, ১২ হাজার ৭৯৮ জন। সেই হিসাবে দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের বিপরীতে পূর্ণকালীন গবেষক রয়েছেন মাত্র ৭৬ জন।
বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষণায় বাংলাদেশে যত অর্থ খরচ হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কৃষিবিজ্ঞান খাতে। খরচের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, তৃতীয় অবস্থানে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি খাত। চতুর্থ অবস্থানে চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা, এ খাতে ব্যয় হয় মোট খরচের ১২ শতাংশ অর্থ।
প্রতিবেদনে গবেষকদের লিঙ্গ ও বয়সভিত্তিক সংখ্যা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, খাতভিত্তিক গবেষকের সংখ্যা ও খাতভিত্তিক গবেষণা ব্যয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী গবেষকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, এ হার প্রায় সাড়ে ৩৬ শতাংশ। এরপরে অবস্থান ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী গবেষকেরা। অন্যদিকে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক গবেষক তাদের সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর হিসেবে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।
বিবিএস জানিয়েছে, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে গবেষণা হয়; সেখানে গবেষকের সংখ্যাও বেশি। উচ্চশিক্ষা খাতে গবেষকের পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। অন্যদিকে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও গবেষকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন ২০১৮–১৯ সালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন গবেষকের হার ছিল ২৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা দুই অর্থবছর পরে বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৪৪ শতাংশে।
আরঅ্যান্ডডি জরিপ বলছে, ২০২০–২১ অর্থবছরে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে মোট ব্যয় হয় ১০ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা (জরিপকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোতে)। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো। মোট ব্যয়ের ৪৭ শতাংশ হচ্ছে ব্যবসা ক্ষেত্রে। এরপরে গবেষণায় ব্যয় করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। আর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সে তুলনায় খুবই কম।
আরও একটি হতাশাজনক তথ্য বিবিএসের জরিপে পাওয়া গেছে, সেটি হলো মোট গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যয় করা হয়েছে মৌলিক গবেষণাকাজে। আর সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে পরীক্ষামূলক উন্নয়নে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখন উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সময়। কিন্তু বরাদ্দ কম থাকলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকব। বিশেষ করে মৌলিক গবেষণার পরিধি বাড়াতে সরকারকে নিজ দায়িত্বে এগিয়ে আসতে হবে।’