সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ লিখেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো মিছিল-মিটিং, আন্দোলন-সংগ্রামে যে পরিমাণ শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে, তার একটি ক্ষুদ্র অংশও যদি সামাজিক উদ্যোগে নিয়োজিত করা যেত, তাতে দলগুলোরও সত্যিকার জনসম্পৃক্ততা বাড়ত।
আজ শুক্রবার দুপুরে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের দেওয়া ফেসবুক পোস্টটি এখানে হুবহু তুলে দেওয়া হলো। এতে তিনি বলেন, প্রথম আলোর একটি সংবাদের সূত্র ধরে শিশু অধিকার নিয়ে কিছুদিন ধরে অনেক আলোচনা ও নাগরিক সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক (বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে) রুবাইয়া মুরশেদের সম্প্রতি প্রকাশিত বই ‘নো বডিস চিলড্রেন’ (ইউপিএল, ২০২২)-এর কথা মনে পড়ল। এ বইতে সে পথশিশুদের নিয়ে তার একটি সামাজিক উদ্যোগের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়েছে। তার অনুরোধে বইটির পেছনের মলাটের জন্য একটি ছবি তৈরি করে দিয়েছিলাম।
আমাদের সংবিধানে ‘রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব’ হিসেবে নাগরিকদের ‘অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা’র কথা বলা আছে। পথশিশুরা স্পষ্টতই এই সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। শুধু সরকার নয়, নাগরিকদেরও যে এখানে অনেক কিছু করার আছে, এই বইতে বর্ণিত উদ্যোগগুলো থেকে তা বোঝা যায়। আর রাজনৈতিক দলগুলো মিছিল-মিটিং, আন্দোলন-সংগ্রামে যে পরিমাণ শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে, তার একটি ক্ষুদ্র অংশও যদি সামাজিক উদ্যোগে নিয়োজিত করা যেত, তাতে দলগুলোরও সত্যিকার জনসম্পৃক্ততা বাড়ত।
বাংলাদেশে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে চমকপ্রদ উন্নতি হয়েছে। তবে সব শিশুকে স্কুলে আনতে হলে এর সঙ্গে সংবিধানে উল্লেখিত ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার’-এর বিষয়টিও জড়িত। সর্বজনীন শিক্ষার সুযোগ থাকলেও সে সুযোগকে কাজে লাগাতে দরকার পরিবারের ন্যূনতম জীবনধারণের সংস্থান। মুশকিল হলো, বাংলাদেশের মতো অন্য অনেক স্বল্পোন্নত দেশের রাষ্ট্রের মূলনীতিতে নাগরিকদের সমান সুযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তার উল্লেখ থাকলেও তা কেবল ‘দিকনির্দেশনামূলক’, কিন্তু প্রয়োজন হলো আইনি বাধ্যবাধকতা।
এ প্রসঙ্গে ভারতের একটি শিক্ষাবিতর্কের কথা উল্লেখ করা যায়। সে দেশের উচ্চতম আদালত ২০০২ সালের একটি সংবিধান সংশোধনী রায়ে ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের শিক্ষার অধিকারের ওপর আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। অনেক দিনের নাগরিক সমাজের দাবির ফলশ্রুতিতেই এটা সম্ভব হয়। তা সত্ত্বেও এই সংশোধনী সমালোচনার মুখে পড়ে। কারণ, শিক্ষার সুযোগের সদ্ব্যবহারের দায়িত্ব অভিভাবকের ওপর দেওয়া হয়, পরিবারের ন্যূনতম জীবনধারণের সংস্থান বিবেচনায় না নিয়েই। এ ছাড়া শিক্ষার মানের উল্লেখ না থাকার জন্যও এই রায়ের সমালোচনা করা হয়।