বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা ফিচ রেটিং জানিয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশের পূর্বাভাস স্থিতিশীল রয়েছে। শুধু ‘নেতিবাচক’ আছে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের রেটিং। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের (এপিএসি) সার্বভৌম আউটলুক ২০২৪-এ এমন তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
ফিচ এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যেসব দেশের রেটিং করে থাকে, সেগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক দেশে আগামী বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে দেশগুলোতে নীতি বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক সংস্কারের গতি কমে যেতে পারে। অন্যদিকে কোরিয়া ও তাইওয়ানের মতো দেশে বর্তমানের মতো আগামী বছরেও ভূরাজনীতির প্রভাব কাজ করবে। এ ছাড়া সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা কিছুটা কমেছে। তবে দুই দেশের সম্পর্ক আগামী বছরেও বেশ চ্যালেঞ্জিং থাকবে বলে জানিয়েছে ফিচ।
এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস কমিয়ে নেতিবাচক করেছিল ফিচ রেটিং। ওই পূর্বাভাসে সংস্থাটি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক (বিবি মাইনাস) করেছে। আইডিআর স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক হওয়ার অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশের খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি, তবে বাংলাদেশ এখনো তার ঋণের দায় মেটাতে বা বাধ্যবাধকতা পূরণে সক্ষম।
ফিচের সেপ্টেম্বরের রেটিং পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের অর্থনীতির বহিস্থ খাতের অবনতির ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, যেমন মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণের পদ্ধতি পরিবর্তন, ঋণদাতাদের সহায়তা নেওয়া—এসব করেও বিদেশি মুদ্রার মজুতের পতন ঠেকানো যায়নি বা বাজারে ডলারের সংকট মেটানো যায়নি। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলেও সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী আরও দুই বড় প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল এবং মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিসও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে। এসঅ্যান্ডপি, মুডিস ও ফিচ রেটিং—এই তিন প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে ‘বিগ-থ্রি’ বলা হয়। ঋণমান নির্ণয়ে এই তিন সংস্থাকে বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান বলে মনে করা হয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সর্বশেষ এপিএসি আউটলুকে ফিচ বলেছে, ২০২৪ সালে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সার্বভৌম দেশগুলো তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। এগুলো হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মন্থর প্রবৃদ্ধি, উচ্চ সুদহার এবং চীনে আবাসন খাতের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। এর মধ্যে উচ্চ সুদহার ঋণ নেওয়ার খরচ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এ অঞ্চলের দেশগুলো স্থিতিশীল অবস্থায় থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
আগামী বছর বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে প্রযুক্তি খাতে ইতিবাচক ধারা দেখা যাবে ব লে জানিয়েছে ফিচ। পাশাপাশি স্থানীয় পণ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। এর প্রভাব পড়বে দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে। তবে এসব সম্ভাবনা সত্ত্বেও ঋণের বাড়তি খরচ ও রাজস্ব ঘাটতি থাকায় অনেক দেশেই ঋণ-জিডিপি অনুপাত বেশি থাকবে।