‘মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ শীর্ষক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এটি মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডের ষষ্ঠ সংস্করণ। গতকাল ঢাকার র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে
‘মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ শীর্ষক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এটি মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডের ষষ্ঠ সংস্করণ। গতকাল ঢাকার র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে

এবার মাস্টারকার্ড অ্যাওয়ার্ড পেল ২৬ প্রতিষ্ঠান

আর্থিক সেবা খাতে উদ্ভাবন ও অন্তর্ভুক্তি সম্প্রসারণে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর ২৬টি প্রতিষ্ঠান ‘মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে। মোট ১৮ শ্রেণিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট ৪৭টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের কার্যক্রমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ পুরস্কার দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড। আজ শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এ বছর বিজয়ীদের মধ্যে চার শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ণ ব্যাংক। সাউথইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক তিন শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে। দুই শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে এবি ব্যাংক, আল–আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।

একটি করে পুরস্কার পেয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বিকাশ, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক, এভারকেয়ার হাসপাতাল, গ্রামীণফোন, মীনা বাজার, প্রাইম ব্যাংক, আরএফএল বেস্ট বাই, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস, শেয়ারট্রিপ, এসএসএল কমার্স ও বাংলাদেশ রেলওয়ের পেমেন্ট সেবা ‘সহজ’।

‘লিডিং বাই রেজিলিয়েন্স’ বা ‘সহনশীলতার মাধ্যমে নেতৃত্ব’ শিরোনামে এবারের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এটি মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডের ষষ্ঠ সংস্করণ। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকদের মধ্যে ডিজিটাল-ফার্স্ট আচরণ গড়ে তোলা এই পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্য। ২০১৯ সালে এ অ্যাওয়ার্ড চালু করা হয়। এবারের আয়োজনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরুর ১১ম বর্ষপূর্তিও উদ্‌যাপন করেছে।

দেশের আর্থিক খাত বর্তমানে সংকটে নেই বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো সংকটে নেই। বর্তমানে আর্থিক খাতে যে অবস্থা রয়েছে, সেটা সম্পূর্ণরূপে সমাধানযোগ্য। ফলে আমরা শ্রীলঙ্কা বা অন্য কোনো দেশের মতো হব না।  ইতিমধ্যে আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্ট পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে, রিজার্ভ ও মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। সুতরাং বহিঃস্থ খাত থেকে ঝুঁকির কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না।’

ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য আমাদের পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রাজনৈতিক পদ্ধতি ঠিক করা ছাড়া শুধু আর্থিক খাতকে ঠিক করা সম্ভব না। আর্থিক খাতে পুরোপুরি সুশাসন বাস্তবায়ন করার বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। অন্তর্বর্তী সরকার স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি পুরোপুরি হয়তো বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তবে আমরা কাজগুলো শুরু করছি।’

গভর্নর আরও বলেন, ‘কিছু ব্যাংকে তারল্যসংকট রয়েছে। এটি কেটে যাবে। আমানতকারীরা কোনো সংকটে পড়বেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয়তা দিচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর খারাপ অবস্থা কাটাতে কিছু বড় পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। তবে এসব সমস্যা কেটে যাবে, এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন তৃষিতা মওলা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একধরনের আর্থিক সংকটের (ফিন্যান্সিয়াল হার্ডশিপ) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত চার মাসে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। ফলে এ সময়ে কোম্পানিগুলোর জন্য আর্থিক সুবিধা বেশি প্রয়োজন। বাংলাদেশের আর্থিক ইকোসিস্টেম, রাজস্ব আয় ও করব্যবস্থা উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সূচনা বক্তব্যে মাস্টারকার্ডের এদেশীয় ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘মাস্টারকার্ড বাংলাদেশে ডিজিটাল উদ্ভাবন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, ফিনটেক এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পেরে গর্বিত। কেননা এসব প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী একটি ডিজিটাল আর্থিক ইকোসিস্টেম গঠনে আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।’

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা এবং দেশের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক, ফিনটেক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।