রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অর্থনীতির অনিশ্চয়তাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। সংস্থাটি আরও বলছে, রাজনীতি ঠিক না থাকলে অর্থনীতি ঠিক থাকবে না। গত দুবার জাতীয় নির্বাচনের সময় বিদেশি সম্পৃক্ততা তেমন ছিল না। এবার আছে। এ বছর অন্য দুবারের মতো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। নির্বাচনের পরও যে শান্তিতে থাকব, সে কথাও বলা যাচ্ছে না।
আজ মঙ্গলবার বনানীর কার্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পিআরআই। সেখানে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর অর্থনীতি নিয়ে এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ ও শর্ত; সংস্কার—এসব বিষয় উঠে আসে। পিআরআই মনে করে, এবারই প্রথমবারের মতো রাজনীতি ও অর্থনীতি—দুই বিষয়েই একই সঙ্গে অনিশ্চয়তা আছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, বিনিময় হার—এসব নিয়ে চাপে আছে অর্থনীতি। আইএমএফ এসব বিষয়ে সংস্কার করতে বলেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে এসব সংস্কার করা সম্ভব নয়। তাই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশেই থাকবে। বিনিময় হার কোথায় ঠেকবে, বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনের পরেও যে এসব সংস্কার হবে, সেই দিকনির্দেশনাও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বড় ধরনের সংস্কার করতেই হবে।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে বড় কোনো সমস্যা হবে না; যদি বৃহৎ শক্তিধর দেশ বাধা না দেয়। এ বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর একটি উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘আমি আইএমএফের মিশনপ্রধান হিসেবে সুদান সফরে গিয়েছিলাম। সুদান তখন আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে ছিল। তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারছিল না। তখন আমরা বলেছি, তাদের ঋণের কিস্তি আপাতত পরিশোধ করতে হবে না। শুধু সংস্কার করলেই হবে। এমন প্রস্তাব আইএমএফের বোর্ডে ওঠার আগের রাতে জি-১০ এই প্রস্তাবে আপত্তি জানায়। প্রস্তাব পাস হয়নি।’
নির্বাচনের আগে এসব সংস্কার করা সম্ভব নয়। তাই মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশেই থাকবে। নির্বাচনের পরেও যে এসব সংস্কার হবে, সেই দিকনির্দেশনাও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বড় ধরনের সংস্কার করতেই হবেআহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই
আহসান এইচ মনসুরের মতে, অর্থনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি এবার আরও কিছু নতুন ইস্যু এসেছে। যেমন শ্রম ইস্যু বড় হয়ে গেছে। এটির এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। শ্রম পরিবেশ ঠিক করতেই হবে। মানবাধিকার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এসব বিষয়ে জবাবদিহি বাড়াতে হবে। কিন্তু অতীত রেকর্ড ভালো না। ভালো করতে হবে। অর্থনীতির চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি অর্থনীতি বাইরের নানা চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে, যা অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলছে। এ বিষয়ে একটি রূপক উদাহরণ দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘খারাপ পরিবেশে ছেড়ে দিলে ছেলে তো বখাটে হবেই।’