বাজেট
বাজেট

নতুন বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে, কর স্তর পুনর্বিন্যাসের চিন্তা

আগামী অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে। বর্তমানে এই সীমা বার্ষিক সাড়ে তিন লাখ টাকা। এই সীমা ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া পুনর্বিন্যাস হতে পারে করহার। করমুক্ত আয়সীমার পরের এক লাখ টাকার ওপর বর্তমানে প্রচলিত ৫ শতাংশ করের স্তর উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। আবার ২৫ শতাংশ করহারের পরে ৩০ শতাংশের আরেকটি স্তর যোগ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে নতুন করহার হতে পারে ১০, ১৫, ২০, ২৫ ও ৩০ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নিম্ন আয়ের করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হতে পারে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। তাদের পরামর্শ হলো, করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ওপরের দিকে একটি নতুন করহার নির্ধারণ করা। এতে ধনীদের কাছ থেকে আরও বেশি কর আদায় করা সম্ভব হবে।

এদিকে কর অব্যাহতি তুলে দেওয়ার কঠিন শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এনবিআরও এখন সেই পথেই হাঁটছে।

  • আজ সোমবার চলতি অর্থবছরের শুল্ক-কর আদায়ের পর্যালোচনা সভা শুরু হব

  • তথ্যপ্রযুক্তি সেবার ওপর কর অবকাশ–সুবিধা উঠতে পারে

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, কর অব্যাহতি যৌক্তিক করা উচিত। বছরের পর বছর কোনো খাতকে এসব সুবিধা দিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। অবশ্য বাংলাদেশের বাস্তবতায় একসঙ্গে সব করছাড় প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়, আবার রাজস্বও দরকার। আইএমএফের শর্ত বিবেচনায় আগামী বাজেটে কিছু খাতের কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া যেতে পারে। নতুন সরকারের মেয়াদের প্রথম দিকের সময়ে রাজস্ব খাতে সংস্কার করাও সহজ হয়।

কিছু কিছু খাতে কর অব্যাহতি তুলে দেওয়ার কথা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে এনবিআর। যেমন মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। ৪ এপ্রিল মেট্রোরেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সেই কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ। বর্তমানে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট মওকুফ–সুবিধা আছে।

এ ছাড়া ২৭ ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি সেবা এক যুগ ধরে কর অব্যাহতি–সুবিধা পেয়ে আসছে। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে এই কর অবকাশ–সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেয়। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। পরে এই সুবিধা আরও চার বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল, যা চলতি অর্থবছরের ৩০ জুন শেষ হচ্ছে।

কর অবকাশ–সুবিধা পাওয়া তথ্যপ্রযুক্তি সেবার মধ্যে আছে—সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি অ্যান্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিকস, গ্রাফিকস ইনফরমেশন সার্ভিস (জিআইএস), আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং অ্যান্ড ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবোটিক প্রসেস আউটসোর্সিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিং।

এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই তালিকার যেসব খাতে খুব একটা বিনিয়োগ হয়নি, সেই খাতগুলোকে কর অবকাশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।

গত পাঁচ দশকে ২০০–এর বেশি প্রজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন খাতকে করছাড় দেওয়া হয়েছে। আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে এনবিআর একটি কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটি বাজেটের আগে করছাড় নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন দেবে। ওই পর্যালোচনা অনুসারে কর অব্যাহতির খাত কমানো হবে। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, এবার অন্তত ভ্যাট ও আয়করের কয়েকটি খাতের কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া হবে।

রাজস্ব পর্যালোচনা শুরু হচ্ছে

চলতি অর্থবছরের শুল্ক-কর আদায়ের পর্যালোচনা সভা শুরু হবে আজ সোমবার। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিনে ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে।

চলতি অর্থবছর থেকেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায়ের শর্ত আছে। বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি রয়েছে ১৮ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এই সময়ে সব মিলিয়ে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।