ফুটবল উন্মাদনা

যারা বিশ্বকাপ জেতে, তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ে

গত সাতবারের মধ্যে ছয়বার দেখা গেছে, যারা বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা জিতেছে, সে বছর তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে।

  • ১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আগের ও পরের দুই বছরের চেয়ে যথেষ্ট বেশি ছিল

  • ২০০২ সালেও একই বিষয় দেখা যায়, সে বছর ব্রাজিলের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.১ শতাংশ

  • ২০০১ ও ২০০৩ সালে ব্রাজিলের প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১.৪ ও ১.১ শতাংশ।

আজ রাতেই শেষ হচ্ছে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ আয়োজনের অর্থনীতি নিয়ে এত দিন অনেক আলোচনাই হয়েছে। জানা গেছে, বিশ্বকাপের মতো বড় প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আয়োজকদের আখেরে তেমন একটা লাভ হয় না। অন্যদিকে যারা বিশ্বকাপ জেতে, এই জয় তাদের অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলে, তা–ও দেখে নেওয়া যাক।

গত ৩০ বছরে মোট সাতটি বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়েছে। এই সাত প্রতিযোগিতা জিতেছে মোট পাঁচটি দল—ব্রাজিল (১৯৯৪, ২০০২), ফ্রান্স (১৯৯৮, ২০১৮), ইতালি (২০০৬), স্পেন (২০১০) ও জার্মানি (২০১৪)। ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সাতবারের মধ্যে ছয়বার দেখা গেছে, যারা বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা জিতেছে, সে বছর তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে, অন্তত আগের ও পরের এক বা দুই বছরের চেয়ে।

১৯৯৪ সালের ব্রাজিলের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ছিল তার আগের ও পরের দুই বছরের চেয়ে যথেষ্ট বেশি। এরপর ২০০২ সালেও একই বিষয় দেখা যায়, সে বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ দশমিক ১ শতাংশ, ২০০১ ও ২০০৩ সালে যা ছিল যথাক্রমে ১ দশমিক ৪ ও ১ দশমিক ১ শতাংশ।

১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২—টানা তিন বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলে ব্রাজিল। এর মধ্যে প্রথম ও শেষবার তারা জিতলেও ১৯৯৮ সালে তারা হেরে যায়। সেবার বিশ্বকাপ জেতে ফ্রান্স। সে বছর ফ্রান্সের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ছিল ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালের চেয়ে বেশি। কিন্তু ২০১৮ সালের এই ধারার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি, সে বছর তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার উল্টো কমে যায়; ২০১৭ সালের ২ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে তা কমে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ।

২০০৬ সালের বিশ্বকাপ জেতা ইতালির ক্ষেত্রেও এই ধারা দেখা যায়। সেবার তাদের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০০৫ ও ২০০৬ সালে যা ছিল যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৮ ও ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জেতা জার্মানির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সে বছর দেশটির প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ২ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৩ সালে যা ছিল শূন্য দশমিক ৪ ও ২০১৫ সালে যা ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ।

২০১০ সালের বিশ্বকাপের সময় বিশ্ব অর্থনীতি কেবল মন্দা কাটিয়ে উঠছে। সেবার বিশ্বকাপ জেতে স্পেন। দেখা গেল, সেই মন্দার সময়ও সেই বছর স্পেনের প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়াল শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে ৪ শতাংশীয় বেশি এবং ২০১১ সালের ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।

২০১৪ সালের বিশ্বকাপের সময় ফোর্বস ম্যাগাজিনের কলামিস্ট অ্যালেন সেন্ট জন বলেন, ‘বিশ্বকাপ জেতার পরপর দেখা যায়, স্বল্প সময়ের জন্য হলেও উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়। এটি অনেকটা শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো, এতে হঠাৎ করে কিছুক্ষণের জন্য শরীরের শক্তি বেড়ে যায়, কিন্তু এর পরপরই শরীর নেতিয়ে পড়ে।’

আজকের বিশ্বকাপের ফাইনালের যে দুটি দল খেলছে, তাদের মধ্যে ফ্রান্স উন্নত দেশ; আর্জেন্টিনার অবস্থা তথৈবচ। চলতি বছর তাদের মূল্যস্ফীতির হার ১০০-তে উঠেছে। জাতি হিসেবেও তারা আবেগপ্রবণ। ফলে বিশ্বকাপ জিতলে এ বছর আর্জেন্টিনার অর্থনীতিতে যে গতি আসবে, তা ধারণা করাই যায়।

কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকড় এত গভীরে প্রোথিত যে এক বিশ্বকাপ জেতার উন্মাদনা দিয়ে তার ক্ষত সারানো যাবে না। এদিকে ইউরোপের মন্দাভাব বিরাজ করছে। ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতলে হয়তো সেই মন্দাভাব তারা কাটাতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ফলে অর্থনৈতিক বিবেচনায় ফ্রান্সের চেয়ে বিশ্বকাপের ট্রফি বেশি দরকার আর্জেন্টিনার।