মূল এডিপির আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ খরচ হবে মোট ১ হাজার ৩০৯টি প্রকল্পে।
সরকারের আগামী ২০২৩–২৪ অর্থবছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দেশের বৃহৎ প্রকল্পগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বড় ১০টি প্রকল্পেই মোট এডিপির ২৩ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ১০ প্রকল্পে সব মিলিয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে ৬০ হাজার ৫১ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্প নতুন এডিপিতে বরাদ্দ পেয়েছে ৯ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। এরপরই মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা এবং চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) ৮ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।
এ ছাড়া বেশি বরাদ্দ পাওয়া শীর্ষ ১০ প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ; পদ্মা সেতু রেল সংযোগ; হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ; ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট (পিএফডি); এমআরটি-১; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ এবং এমআরটি-৬।
প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। তবে পুরোপুরি এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারছি না, এটা অস্বীকার করব না।এম এ মান্নান, পরিকল্পনামন্ত্রী
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন অর্থবছরের এডিপি পাস করা হয়েছে। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এই সভায় মন্ত্রিপরিষদসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন সামনে রেখে সরকার আরেকটি বড় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) হাতে নিয়েছে। এ জন্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পসহ সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩০৯টি প্রকল্পে প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে ৮২৫টি প্রকল্প। সেখান থেকে বছরজুড়ে প্রকল্প পাস করা হবে। দেওয়া হবে নতুন বরাদ্দ।
আগামী অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া যাবে বাকি ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।
এনইসি সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, জনগণের স্বার্থে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সামনে বলেই প্রকল্প নয়; সবই জনস্বার্থের প্রকল্প। তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। তবে পুরোপুরি এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারছি না, এটা অস্বীকার করব না।’ তিনি আরও বলেন, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বিলাসী ব্যয় বন্ধ করতে হবে।
এবার দেখা যাক কোন পাঁচটি খাত সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেল। বরাদ্দের দিক থেকে শীর্ষে আছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাত ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা বা এডিপির প্রায় ২৯ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, শিক্ষা খাত ২৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাদি খাত ২৭ হাজার ৪৫ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য খাত ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।
অন্যদিকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ বিভাগ ৪০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ। এ দুটি বিভাগ যথাক্রমে ৩৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা এবং ৩৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা পেয়েছে।
আগামী এডিপিতে বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ৮২৫টি প্রকল্প। এসব প্রকল্প বছরজুড়ে পাস করা হবে। ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে ৩১৪টি প্রকল্প শেষ করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী এডিপিতে ৭৯টি সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
এদিকে বাসস জানায়, এনইসি সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে আরও প্রকল্প গ্রহণ করার পর্যাপ্ত সক্ষমতা রয়েছে, তাদের আরও প্রকল্প গ্রহণের এবং সাধারণভাবে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।