বিআইডিএসের সেমিনারে মত

লকডাউনে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি

বিআইডিএস লোগো
বিআইডিএস লোগো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে লকডাউন দেওয়া হয়েছে, তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। শিশুরা করোনাভাইরাসে তেমন একটা আক্রান্ত হয়নি। তাদের মৃত্যুহার ছিল অনেক কম। কিন্তু বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। জিডিপি কমলে মানুষের জীবনমান ও গড় আয়ু কমে যায়।

সুইডেন লকডাউন করেনি। সেখানে ২০২০ সালে অনেক মানুষ মারা গেছে। তার কারণ হলো, প্রবীণনিবাসে এই রোগ ছড়িয়ে পড়া আর বৃদ্ধদের জন্য কোভিড ছিল প্রাণঘাতী। আবার যেসব দেশে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছে, সেখানেও অনেক মানুষ মারা গেছে। অর্থাৎ লকডাউন দিয়ে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায়নি।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষণ অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনানিশ চৌধুরী। গতকাল বিআইডিএসের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো কাজী ইকবাল।

সেমিনারে করোনা মহামারি মোকাবিলায় সারা বিশ্বে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আনানিশ চৌধুরী। তিনি বলেন, কোভিডের কঠোর লকডাউনের সময় অন্যান্য রোগেও অনেক মানুষ মারা গেছে। কিন্তু সেই তথ্য গণমাধ্যমে অত গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়নি। সে জন্য তা চোখেও পড়েনি। অর্থাৎ যে তথ্য বারবার মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়, তাতে মানুষ আতঙ্কিত হতে পারে। এটা একধরনের আচরণগত বিষয় বা সংক্রামক।

সেমিনারের সঞ্চালক কাজী ইকবাল বলেন, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিকল্প ছিল কি না ভেবে দেখা উচিত। মহামারি মোকাবিলায় চিকিৎসা-ব্যতীত অন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার লাভ-ক্ষতি আছে। লকডাউনের লাভ কী হবে, সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কী ক্ষতি হতে পারে, তাতে তেমন একটা আলোকপাত করা হয়নি।

কাজী ইকবাল আরও বলেন, জনমনে আতঙ্ক তৈরি হলে গণতান্ত্রিক সরকারগুলো দেখাতে চায়, তারা কোনো না কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সরকারগুলো অনেক ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। এ ক্ষেত্রে নীতিগত পক্ষপাতও আছে। নীতিপ্রণেতারা সমাজের উচ্চ স্তরের মানুষ, তাঁদের বয়সও বেশি, সে জন্য তাঁরা লকডাউন চান। তরুণেরা নীতি প্রণয়নে থাকলে হয়তো এত লকডাউন হতো না।

উপস্থাপনায় বিভিন্ন দেশের লকডাউনের প্রভাবের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন আনানিশ চৌধুরী। তিনি বলেন, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মুদ্রানীতি কমিটির সাবেক সদস্য ডেভিড মিলস দেখিয়েছেন, লকডাউন দিয়ে যদি ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করা যায়, তাহলেও বছরে অর্থনীতির মোট ক্ষতি হবে ৬ হাজার ৮০০ কোটি পাউন্ড। যত কম মানুষের জীবন বাঁচবে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বেশি।