রোজার আগে দেশের বাজারে দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার।
রোজার আগে দেশের বাজারে দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার।

চার নিত্যপণ্যে শুল্কছাড়ের ফল পেতে সময় লাগবে

বাজারে নতুন করে দাম বাড়েনি। সিদ্ধান্ত দেরিতে আসায় রোজার আগে বাজারে প্রভাব পড়বে কি না, সন্দেহ আছে।

রোজার আগে দেশের বাজারে দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। এমন এক সময়ে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে, যখন বাজারে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম চড়া। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত বৃহস্পতিবার আলাদা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর ঘোষণা দেয়। এরপর নতুন সপ্তাহ শুরু হলেও বাজারে এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি। পণ্যগুলোর দাম আগের অবস্থাতেই রয়েছে।

সাধারণত দেশে শুল্ক-কর আরোপ হলে কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে বা নেতিবাচক খবর থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে সেটির দাম বেড়ে যায়। যেমন প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার খবরে এক রাতেই বাজারে পণ্যটির দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। অথচ সরকার শুল্ক-কর কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরও বাজারে প্রভাব পড়েনি। গতকাল শনিবার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ও কারওয়ান বাজারে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে; অর্থাৎ চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

শুল্কছাড়ের প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগার কথা। আর যে হারে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে, তাতে বাজারে প্রভাব পড়বে বলেও মনে হয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আরও শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। ছাড় দিলে, বড় ছাড় দিতে হবে এবং পদক্ষেপ নিতে হবে সঠিক সময়ে।
মো. বশির উদ্দিন, সভাপতি, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি

এমনকি রোজার আগে বাজারে বড় কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের সংশয় আছে। কারণ, সরকার এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে নিয়েছে, যখন রোজার বাকি আর মাসখানেক। এই সময়ের মধ্যে বিশেষ করে অপরিশোধিত চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি করে পরিশোধনের পর রোজার বাজারে ছাড়া কঠিন হবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।

এ নিয়ে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শুল্কছাড়ের প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগার কথা। আর যে হারে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে, তাতে বাজারে প্রভাব পড়বে বলেও মনে হয় না। বাজারে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আরও শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। ছাড় দিলে, বড় ছাড় দিতে হবে এবং পদক্ষেপ নিতে হবে সঠিক সময়ে। এমন সময়ে সিদ্ধান্ত এল, যখন রোজার পাইকারি বেচাকেনা অনেকটা হয়ে গেছে। সিদ্ধান্তে গড়িমসি হলে বাজারে দাম না কমে, বরং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

গতকাল কারওয়ান বাজার ও মৌলভীবাজারে খুচরায় প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। বোতলজাত সয়াবিন লিটার ১৭৩ টাকা লিটার দরে বিক্রি হয়েছে। খোলা সয়াবিনের লিটার ১৫৮ থেকে ১৬৫ টাকা। এ ছাড়া পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকার লিটার দরে। এক সপ্তাহ ধরে পণ্যগুলোর দাম এ রকমই চলছে।

এদিকে বাজারে নানা পদের খেজুর রয়েছে। দামেও ভিন্নতা দেখা যায়। ইতিমধ্যে খেজুরের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, শুল্কছাড়ের ফলে খেজুর আমদানি বাড়বে। তখন বাজার কিছুটা নামতে পারে।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের চাল আছে। দামেও রয়েছে ভিন্নতা। দুই দিনে কোনো চালের দাম কমেনি। আমদানি শুরু হলে তখন বাজার নামতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক করছাড় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সয়াবিন ও পাম তেলে কেজিতে সাত থেকে আট টাকা শুল্ক-কর কমবে। চাল আমদানিতে প্রতি কেজিতে শুল্ক কমবে সাড়ে ২৩ টাকা। এ ছাড়া কার্টনে আনা সাধারণ মানের খেজুরের কেজিতে শুল্ক কমবে ৩৩ টাকা। সবচেয়ে কম, মানে কেজিতে ৭৫ পয়সা শুল্ক কমবে চিনিতে। 

মৌলভীবাজারের চিনি ব্যবসায়ী ইয়াসিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চিনির দর অনেক দিন ধরে বেড়ে আছে। সরকার কয়েক দফা দাম বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হয়নি। মিল থেকে চিনি বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এখনো সেভাবেই বাজার চলছে। রোজার আগে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মাসের শেষ দিকে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নিত্যপণ্যের শুল্ক কমানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। এরপর আলোচ্য চার পণ্যের দাম আর নতুন করে বাড়েনি। এর মধ্যে চালের কেজিপ্রতি দাম দুই-তিন টাকার মতো কমেছে। চালে শুল্ক হ্রাসের ফলে বাজার স্থিতিশীল হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান বলেন, আমদানি হলে অবশ্যই বাজারে তার প্রভাব পড়বে। সে ক্ষেত্রে আমদানি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই মুহূর্তে বাজারে চালের সরবরাহ ভালো। তাতে নতুন করে সংকটের কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর শুল্ক-কর কমানোর নির্দেশের পর দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া ছিল ব্যবসায়ীদের মধ্যে। যাঁদের চালান বন্দরে আসেনি, তাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তের। আর যাঁরা এরই মধ্যে পণ্য খালাস করেছেন, তাঁরা শুল্ক-কর কমানোর বিপক্ষে ছিলেন। গত দুই দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চিনি বাদে অন্যান্য পণ্য এসেছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।