আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পেতে পারে। এই ঋণ ছাড়ের বিষয়টি আগামী বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় উঠবে। সেখানে অনুমোদিত হলে তার দিন পাঁচেক পরে, অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি তা ছাড় করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে আইএমএফের মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
এদিকে ৪৭০ কোটি ডলারের চলমান এই ঋণ কর্মসূচির আকার আরও ৭৫ কোটি বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। এই অর্থ দিতেও সম্মত হয়েছে আইএমএফ। তবে এ জন্য কর আদায় ও নীতি গ্রহণকারী সংস্থাকে আলাদা করাসহ রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মতো কিছু কঠোর শর্ত দিয়েছে আইএমএফ।
চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নতুন ঋণের বিষয়ে দর–কষাকষি করতে ৩ ডিসেম্বর থেকে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে। ১৩ সদস্যের এই দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। প্রতিনিধিদলটির সফর শেষে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থছাড়ের কথা জানান ক্রিস পাপাজর্জিও।
সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস পাপাজর্জিও জানান, চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড়ে তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে রাজস্ব আয় বাড়ানো–সংক্রান্ত একটি কমিশন গঠনসহ কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আগামী পাঁচ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ সভায় চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। বোর্ড অনুমোদন দিলে ঋণ ছাড় করা হবে। একই সঙ্গে চলমান কর্মসূচির আওতায় ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৩০ কোটি ডলার করতেও তাঁরা সম্মত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে বেশ কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির জন্য গত জুনভিত্তিক দেওয়া বিভিন্ন শর্তের মধ্যে কর–রাজস্ব সংগ্রহ ছাড়া সব শর্ত পূরণ হয়েছে। এর আগের কিস্তিতেও কর–রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। তাই এবার কর আহরণ বাড়ানোর বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সংস্থাটি। পরবর্তী কিস্তি থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ ছাড়া মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার শর্তও দিয়েছে আইএমএফ।
নতুন টাকা ছাপিয়ে কিছু দুর্বল ব্যাংককে দেওয়ার বিষয়ে আইএমএফ মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটা হয়তো সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু এটা লম্বা সময়ের জন্য হতে পারে না। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে সঠিকভাবে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করা, বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়ন ও আর্থিক খাতে পুনর্গঠনের জন্য একটি পথনকশা তৈরির পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।