অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী

‘সরকার কিছু করেনি মানে সেনাবাহিনী কিছু করবে’, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী

অবসরে যাওয়ার পরও বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ব্যবস্থা নেবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন প্রসঙ্গক্রমে তিনি সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে এ কথা বলেন।

এর আগে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণমূর্তি ভি সুব্রামানিয়ান।

অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, অর্থনীতির কোন সূচকটি ভালো আছে বলে আপনি বলবেন? জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বলার দরকার নেই।

আবার অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, অর্থনীতির প্রথম চ্যালেঞ্জ কি মূল্যস্ফীতি? অর্থমন্ত্রী বলেন, শুধু মূল্যস্ফীতি নয়; আরও আছে রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়ন, রাজস্ব আদায় ইত্যাদি।

ডলারের দামকে আর চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচনা করছেন না অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘আইএমএফ অনেক দিন থেকেই ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করতে বলছিল। আমরা এটা করেছি। আইএমএফ এখন খুশি। অর্থাৎ আমরা ঠিক পথেই আছি।’

অর্থমন্ত্রী নিজেই হঠাৎ বলেন, ‘এখন ঋণখেলাপিদের ধরতে হবে।’ এ বাক্য শেষ করার পর চুপ থাকলে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘পারবেন? ঋণখেলাপিরা তো অনেক শক্তিশালী।’ তখন তিনি বলেন, ‘দেখা যাক পারি কি না। আপনারা দেখছেন, সাবেক পুলিশপ্রধানের (বেনজীর আহমেদ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁর কি ক্ষমতা কম ছিল?’

সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত যে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তাতে সরকারের সমর্থন আছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্ন করেন, সাবেক সেনাপ্রধান কি ধরা পড়েছেন? সব সম্পত্তি জব্দ করার যে আদেশ এসেছে? সাংবাদিকেরা জানান, সম্পত্তি জব্দের আদেশ এসেছে সাবেক পুলিশপ্রধানের।

দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত সোমবার মধ্যরাতের পর বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আজিজ আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে। সাংবাদিকেরা এ তথ্য জানালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধানও ধরা পড়েছেন; যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলেও বিষয়টি তো জনসমক্ষে চলে এসেছে।’

সাংবাদিকেরা তখন বলেন, সাবেক সেনাপ্রধানের বিষয়ে সরকার তো কিছু করেনি। অর্থমন্ত্রী জবাবে বলেন, সরকার কিছু করেনি মানে সেনাবাহিনী কিছু করবে।

আজিজ আহমেদ তো এখন সেনাবাহিনীতে নেই—বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে অর্থমন্ত্রী বলেন, অবসরে যাওয়ার পরও সেনাবাহিনী কিছু করতে পারে।

অর্থমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। অবসরে গেলেও সেনা আইনে সেনাবাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারে। শুধু তা–ই নয়, সরকার চাইলে, আদালত চাইলে, এমনকি কেউ মামলা করলেও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে।’

ঋণের কিস্তি জুনে আসবে

আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ আগামী জুনে পাওয়া যাবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন—এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গভর্নর তো আলাদা কিছু নন, সরকারেরই অংশ। আগে তিনি অর্থসচিব ছিলেন। কিছু পত্রিকায় বলা হয়েছে, তিনি দায়িত্বজ্ঞানহীন; তাঁর কোনো ধারণা নেই। এমনি এমনিই তিনি অর্থসচিব হয়েছেন? এখন তো তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেছেন, বিশ্বের কোথাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এভাবে ঢুকতে দেওয়া হয়? সব খুলে দেয়? ওখানে তাদের লোক আছেন, মুখপাত্র আছেন।

অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া থাকলেও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তা থাকে না। ফলে অন্য দেশের সঙ্গে তা তুলনীয় নয়। এসব কথা জানিয়ে সাংবাদিকেরা অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকেরা ঢুকতে পারবেন কি পারবেন না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে আলাপ করব।’