১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি এবং ৭ লাখ টন রাইস ব্র্যান বা কুঁড়ার তেল কিনতে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা প্রদানের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় নাকচ করে দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত সপ্তাহে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষকে চিঠি দিয়ে বলেছে, ‘সময়োপযোগী না হওয়ায় এ প্রস্তাব নামঞ্জুর করা হলো।’
রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দেওয়ার প্রস্তাবটি ছিল পণ্য বিক্রয়কারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) অনুকূলে। অর্থ বিভাগকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, টিসিবি দুটি লটে মোট ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করবে আর চারটি লটে ৭ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান তেল কিনবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চাওয়া হচ্ছে, দুটি পণ্য আমদানি ও কেনায় দরকার ছয়টি বিশ্বাসের ঋণ (লোন অ্যাগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিট বা এলটিআর)। এলটিআর নামে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেওয়া হয় আমদানি করা পণ্য বন্দর থেকে পরিবহন ও বাজারজাতকরণের জন্য। নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ৯০ থেকে ১২০ দিন হয়ে থাকে।
এলটিআর ঋণের বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার অনুকূলে দুটি এবং রূপালী ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার অনুকূলে চারটি আলাদা রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে।
এদিকে গত ২ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে রাইস ব্র্যান তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎসাহিতকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অংশগ্রহণে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাইস ব্র্যান তেলকে টিসিবির পণ্য তালিকা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের রেশনে যুক্ত করার পরামর্শ এসেছে।
তবে কর্মশালার কার্যবিবরণী বিবেচনায় নিয়ে অর্থ বিভাগ দেখেছে, এতে বিভ্রান্তিকর সব তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে এবং উৎপাদনের পরিমাণই ঠিক নেই। যেমন বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বছরে তিন লাখ টন রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন করা সম্ভব। আবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে চার লাখ টন রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন করা যাবে। এ পরিমাণ আরও দুই লাখ টন বাড়তে পারে। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাঁচ লাখ টন রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, পেঁয়াজ আমদানি ও রাইস ব্র্যান তেল কেনার কোনো যৌক্তিকতা নেই এখন। ফলে এলটিআর ঋণ দেওয়ারও কোনো কারণ নেই।
যদিও টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান ওই কর্মশালায় বলেছিলেন, রাইস ব্র্যান তেলের বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও চাহিদা সৃষ্টি হয়নি। আর ১৭টি নিত্যপণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের পাশাপাশি রাইস ব্র্যান তেল থাকলে ভর্তুকি দামে এ তেলও বিক্রি করা যাবে।