প্রান্তিক মানুষদের বাড়ি নির্মাণে ঋণ দিতে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি) থেকে তহবিল পেয়েছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। এই তহবিলের আকার ২৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে) এবং এই ঋণের পুরোটা পাবেন তুলনামূলকভাবে সুবিধাবঞ্চিত ও বড় শহরে বাস করেন না, এমন মানুষেরা। আগামী জানুয়ারি থেকে এ ঋণ কর্মসূচি শুরুর পরিকল্পনা করছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
বিএইচবিএফসি বলছে, বর্তমানে যে ঋণ দেওয়া হয়, তার ৭৫ শতাংশই দেওয়া হয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের বাইরের গ্রাহকদের। নতুন যে তহবিলটি তাদের কাছে আসছে, তার পুরো অর্থ ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট সিটি করপোরেশন বহির্ভূত এলাকায়। অর্থাৎ বাড়ি নির্মাণের এই ঋণ পেতে গ্রামীণ এলাকার মানুষ অগ্রাধিকার পাবেন। বিনিয়োগের সময় আইএসডিবি সরকারি এই গৃহনির্মাণ ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানকে এমন শর্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে।
বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুমোদিত তহবিলের অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়া চলমান। এই অর্থ ছাড় শুরু হলে গ্রামগঞ্জে আমাদের কাজের পরিধি আরও বাড়বে। এর আগেও আইএসডিবি থেকে আমরা একটা তহবিল পেয়েছিলাম, সেই অর্থ ভালোভাবে ব্যবস্থাপনার ফলে নতুন করে তারা আবার তহবিল দিচ্ছে। এবার ৫২টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ অর্থ আমরা পাচ্ছি।’
আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমাদের দেওয়া ঋণের তিন-চতুর্থাংশ বড় দুই শহরের বাইরে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের কাছে আমাদের সেবা পৌঁছে দিতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সব জেলা পর্যায়ে শাখা খোলা সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়েও অফিস নেওয়ার মাধ্যমে সেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, ফ্ল্যাট ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণে বিএইচবিএফসি সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। কৃষকদের জন্য অবশ্য বিএইচবিএফসির ঋণের সুদহার আরও কম, মাত্র ৭ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সুদের হার কম এবং ঋণ দেওয়া হয় সরল সুদে। অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ আদায় করে না প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংকগুলো এখন ঋণের সুদহার বাড়ালও বিএইচবিএফসি তাদের সুদহারে কোনো পরিবর্তন আনছে না। এসব ঋণের সর্বনিম্ন মেয়াদ পাঁচ বছর ও সর্বোচ্চ ২৫ বছর।
গত অর্থবছরে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি গৃহঋণ বিতরণের নতুন রেকর্ড করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএইচবিএফসি গৃহনির্মাণ ঋণ বিতরণ করে ৬৯৬ কোটি টাকার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ বিতরণ ছিল ৫৮৯ কোটি টাকা। গত কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ বিতরণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।
বিশেষায়িত এ প্রতিষ্ঠানের মূল কাজই হলো গৃহনির্মাণের জন্য ঋণ বিতরণ। পাশাপাশি সংস্থাটি ফ্ল্যাট নিবন্ধন, আবাসন উন্নয়ন ও মেরামত এবং বাড়ি নির্মাণে সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্যও ঋণ দিয়ে থাকে।
বিএইচবিএফসি থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে বাজেটের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা গ্রাহকের নিজের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ করতে হয়। অর্থাৎ এক কোটি টাকার প্রকল্পে ৭০ থেকে ৯০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয় বিএইচবিএফসি। বাকি ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকা গ্রাহককে দিতে হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ঋণ অনুমোদন করাতে হয়।
বিএইচবিএফসির ঋণের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরও রয়েছে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সুবিধা। কাগজপত্র তৈরিতেও সহায়তা করে সংস্থাটি। সব বিভাগীয় শহর ছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলায় শাখা আছে সংস্থাটির।
প্রতিষ্ঠানটি বাড়ি নির্মাণ ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ১২ ধরনের ঋণ দেয়। পণ্যগুলো হচ্ছে স্বপ্ননীড়, নগরবন্ধু, প্রবাসবন্ধু, পল্লীমা, কৃষক আবাসন ঋণ, আবাসন মেরামত, আবাসন উন্নয়ন, ফ্ল্যাট ঋণ, ফ্ল্যাট নিবন্ধন ঋণ, হাউজিং ইকুইপমেন্ট ক্রয় ঋণ, সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ও ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক বাড়ি নির্মাণ বিনিয়োগ ‘মনজিল’।
বিএইচবিএফসি বলছে, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে কর্মরত স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণে সহায়তার জন্য চলতি বছরের শুরুতে ‘স্বপ্ননীড়’ নামে একটি পণ্য নিয়ে আসা হয়েছে। এই পণ্যটিতে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বাড়ি নির্মাণের জন্য শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ পণ্য ‘মনজিল’-এর চাহিদা বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।