সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে লন্ডনের রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, আইনজীবী ও ঋণদাতা কোম্পানিগুলোর সম্পর্ক কী, তা খুঁজে বের করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে তাগাদা দিয়েছেন দেশটির সংসদ সদস্যরা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যরা দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে এই অনুরোধ জানালেন।
দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ২০ কোটি পাউন্ড মূল্যের ২৫০টি বাড়ি ও ফ্ল্যাট আছে। যদিও তাঁর আইনজীবী সম্প্রতি বলেছেন, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী এসব সম্পত্তি কিনেছেন। ফলে তাঁর লুকানোর কিছু নেই।
লেবার পার্টির সংসদ সদস্য ফিল ব্রিকেল দেশটির নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে চিঠি পাঠিয়ে নিশ্চিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যেসব কোম্পানি এসব সম্পত্তি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অর্থের উৎস যথাযথভাবে খতিয়ে দেখেছে কি না। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে অর্থ পাচার–সংক্রান্ত আইন অনুসরণ বা মান্য করা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের রেভিনিউ অ্যান্ড কাস্টমস (এফডিসিএ), ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি (এসআরএ) ও সলিসিটর্স রেগুলেশন অথরিটিকে (এসআরএ) এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। ফিল ব্রিকেল এই তিন সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এসব সম্পত্তি কেনাবেচার সময় আইনি প্রতিষ্ঠান ও ঋণদাতারা আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে চলছে কি না, তা নিশ্চিত করা হোক।
তাঁর ভাষ্য, যুক্তরাজ্য যে বিশ্বের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের রাজধানী হিসেবে লন্ডনকে গড়ে তুলতে চায়, তা প্রমাণ করতে হলে এ ধরনের অভিযোগে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবিস্তারে তদন্ত করতে হবে।
এর আগে লন্ডনে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যে সম্পদ আছে, তা বাংলাদেশকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেওয়া দরকার বলে মত দেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি আপসানা বেগম। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে তদন্ত ও সম্পদ জব্দ করতে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চান দেশটির ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এই এমপি।
এদিকে যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি কমিটি ও কর ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত এমপিরা সে দেশে বাংলাদেশিদের অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধারে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা নিয়ে গত সপ্তাহে বৈঠক করেছেন। এই কমিটির চেয়ারম্যান এমপি জো পাওয়েল দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে এসব সম্পদ নিয়ে তদন্ত করতে তাগাদা দিয়েছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতারা যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে সম্পদ কেনেন বলে অভিযোগ আছে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর ভূমিকা কী, তা নিয়ে সম্প্রতি কয়েক বছরে তদন্ত হচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর এ বিষয়গুলো আরও প্রকাশ্যে এসেছে।
ব্রিকেল নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের এই ফার্মগুলো সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদ কেনাবেচার সময় সন্দেহজনক তৎপরতার কথা জানিয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে। সম্পদ কেনাবেচার সময় অর্থ পাচারের সন্দেহ হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তা অবশ্যই জানানোর কথা। সেই সঙ্গে তিনি জানতে চেয়েছেন, এসব ফার্ম সন্দেহজনক তৎপরতার কথা না জানিয়ে থাকলে তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে কি না।
আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও যুক্তরাষ্ট্রে সাইফুজ্জামানের আরও কয়েক শ ফ্ল্যাট আছে। ২০২৩ সালে নতুন করে ফাঁস হওয়া সম্পত্তির তথ্যে দেখা যায়, সাইফুজ্জামান সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৫০টির বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক। এই সম্পত্তির মূল্য ১৪ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।
সেই নথিতে আরও জানা যায়, সাইফুজ্জামানের স্ত্রী রুকমিলা জামান দুবাইয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের আরও ৫০টি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক। অর্থ পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।