চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ৩৮ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা কম আদায় করতে পেরেছে এনবিআর।
প্রতিবছরের মতো এবারও অর্থবছরের শুরু থেকেই লক্ষ্য অর্জনে পিছিয়ে পড়েছে এনবিআর। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে এবার বাড়তি রাজস্ব আদায়ের শর্তও পূরণ করতে হবে সংস্থাটিকে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই-ডিসেম্বরে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছে। এই সময়ে সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। গত ৬ মাসে মাসওয়ারি হিসাবে গড়ে ২৭ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইএমএফের দেওয়া শর্ত পূরণে চ্যালেঞ্জ আছে। এসব শর্ত কীভাবে পূরণ করা যায়, তা নিয়ে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগ কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব অর্থনীতি যখন নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন দেশের অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে অংশীজনদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখছে এনবিআর, যা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে।
কোন খাতে কত আয়
এনবিআরসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর—এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটিই গত ছয় মাসে লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। এ তিন খাতের মধ্যে রাজস্ব আদায়ে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। এই খাতে ৬ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। গত জুলাই-ডিসেম্বরে আয়কর খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৬০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এই সময়ে আদায় হয়েছে ৫১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।
অন্যদিকে আমদানি খাতে ৬ মাসে ৫৭ হাজার ৬৩২ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে ৪৯ হাজার ৬৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এই খাতে ঘাটতি ৮ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। ভ্যাট খাতে ঘাটতি ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। ভ্যাট আদায় হয়েছে ৬৪ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকার। এই খাতে গত ৬ মাসে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৭০ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।
চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে না পারলে বিভিন্ন খাতে সরকারের খরচ কমাতে হয়। খরচ কমানোর অংশ হিসেবে বরাদ্দ কমানো হয় উন্নয়ন প্রকল্পে। কারণ, বেতন-ভাতা, ঋণের কিস্তি পরিশোধ, ভর্তুকি—এসব খাতে সরকারের খরচ কমানোর সুযোগ নেই।