আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা কমল ৫৩৬ কোটি ডলার।
রিজার্ভ সংরক্ষণে ১৬ মাসে কয়েক দফা ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয় লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনার জন্য। এরপরই আইএমএফ তা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আইএমএফ গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানায়নি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি রয়েছে। এ কর্মসূচি থেকে দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে চলতি মাসেই। তার আগে দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকায় এসে আইএমএফের দল ঋণ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যালোচনা বৈঠক শুরু করে গত ২৪ এপ্রিল। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে আজ তা শেষ করে আইএমএফ। এরপর আজই সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে আইএমএফ। এতে মূল বক্তা ছিলেন দলনেতা ও সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্বল অবস্থা থেকে ব্যাংক খাতকে তুলে আনার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও অর্থের চাহিদা রয়েছে এবং সরকারের উচিত হবে, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার যথাযথ কৌশল তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করা। এ ছাড়া টেকসই আর্থিক খাত তৈরিকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে চলমান ঝুঁকিভিত্তিক তদারকব্যবস্থার কাজটিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া।
অনেক শর্ত পূরণ করার পথে থাকলেও ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সরকারের অনুরোধে আইএমএফ পরে সংশোধন করে লক্ষ্যমাত্রাই কমিয়ে দেয়। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার এবং এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ৯২৭ কোটি ডলার রিজার্ভ থাকার কথা। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে রিজার্ভের নতুন লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত হয় বলে জানা গেছে।
আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্টস ও ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম৬) পদ্ধতি অনুযায়ী মার্চ শেষে দেশের গ্রস বৈদেশিক রিজার্ভ (জিআইআর) ছিল ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ডলার। বিপিএম ৬ পদ্ধতিতে নিট রিজার্ভ নির্ধারণে জিআইআর থেকে রিজার্ভ সম্পর্কিত দায়গুলো বাদ হওয়ার কথা। এ দায়ের পরিমাণ সাধারণত ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার হয়। সে হিসাবে নিট রিজার্ভ দাঁড়ায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশকে ১১৫ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ১১ মাসে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার বিক্রি করার নীতি চালু রাখা হলে রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্ত বাংলাদেশ কোনো দিনই পূরণ করতে পারবে না। বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করে আগে ওই নীতি থেকে সরতে হবে।