বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) আগামী অর্থবছরে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং তার পরের অর্থবছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)।
‘এইচএসবিসি ইকোনমিক আউটলুক: এ পারসপেকটিভ অন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এমন তথ্যই দিয়েছেন এইচএসবিসির চিফ এশিয়া ইকোনমিস্ট ও কো-হেড অব গ্লোবাল রিসার্চ এশিয়া ফ্রেডরিক নিউম্যান। রাজধানীর একটি হোটেলে গত রোববার আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বর্তমানে এশিয়ায় রেকর্ডসংখ্যক প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ রয়েছে। বাংলাদেশকে এই সুযোগ কাজে লাগানোর তাগিদ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য রুবানা হক, ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাভেদ আখতার, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাহবুব উর রহমান ও হোলসেল ব্যাংকিংয়ের প্রধান জেরার্ড হাউহে। এইচএসবিসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায়।
ফ্রেডরিক নিউম্যান পূর্বাভাস দেন, ‘আগামী চার বছরে বাংলাদেশের গড় ইনক্রিমেন্টাল জিডিপি ৬০ বিলিয়ন বা ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি হবে, যা এশিয়ার অন্য অনেক দেশের চেয়ে বেশি। জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির চাপ হ্রাস, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গৃহস্থালির ব্যয়ের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ভাবমূর্তির উন্নতি হওয়ায় দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। রপ্তানিকারকদের নেতৃত্বে দেশে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
ফ্রেডরিক নিউম্যান বিশ্বের অর্থনৈতিক নীতিমালার অনিশ্চয়তা সূচক উপস্থাপন করেন। এই সূচক করোনা মহামারির সময় সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়, যার মাধ্যমে অর্থনীতির বহুমুখী চ্যালেঞ্জ নির্দেশিত হয়। তবে বাংলাদেশ সব চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে। এ ছাড়া ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন এবং আর্থিক ও কাঠামোগত সংস্কারে গতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
প্যানেল আলোচনায় সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশ অভ্যন্তরীণভাবে ভালো করা সত্ত্বেও বাহ্যিক কারণে উদ্ভূত অর্থনৈতিক সমস্যাজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস ও টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি। রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর পাশাপাশি কর আদায়ের আধুনিকায়ন এবং রপ্তানি বহুমুখী করার ওপর আমাদের আরও জোর দিতে হবে।’
ফ্রেডরিক নিউম্যান বলেন, তৈরি পোশাকশিল্পের ক্রমবর্ধমান উন্নতির পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বাংলাদেশকে আগামী দিনে আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে। এখন মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে সক্ষম হলে তা অর্থনীতিকে আরও বেগবান করবে।
এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব উর রহমান বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশেও আমরা দক্ষ কর্মী বাহিনী, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স প্রবাহের মাধ্যমে অর্থনীতির অগ্রগতির গতিপথ অটুট রেখেছি। অর্থনীতির ইতিবাচক লক্ষণ দ্বারা উৎসাহিত হয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করতে এইচএসবিসি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’