১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটে মেসার্স ব্যান্ডবক্স নামে লন্ড্রির ব্যবসা শুরু করেন সিরাজুল হক। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যান্ডবক্সের নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। এরপর আর সিরাজুলকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৮৪ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর এ ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর ছেলে ফজলুল হক। সেই থেকে তিনিও নিয়মিত কর দিয়ে আসছেন। দীর্ঘ সময় ধরে কর দিয়ে তিনি এ বছর চট্টগ্রামের সেরা করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন।
আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে অবস্থিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের বঙ্গবন্ধু হলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফজলুল হককে ‘দীর্ঘ সময়ে কর প্রদানকারী’ শ্রেণিতে সেরা করদাতার সম্মাননা দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের আয়কর বিভাগ এ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা ফজলুল হক (৬৯) এবারই প্রথম সম্মাননা পেলেন। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আয়কর দিতে হবে। পদ্মা সেতু হয়েছে, চট্টগ্রামে টানেল হচ্ছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আয়কর দিতে হবে। আর রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে আয়কর দেওয়ার বিকল্প নেই।
অবশ্য শুধু ফজলুল হক নন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৫টি জেলা থেকে ২০২১-২২ করবর্ষে সর্বোচ্চ ও দীর্ঘ সময় কর প্রদানকারী ৪২ জনকে সম্মাননা ও সনদপত্র দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি চট্টগ্রামের মহাপরিচালক মো. মাহবুবুজ্জামান, কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রাম বেঞ্চের সদস্য মকবুল হোসেন, চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। আরও উপস্থিত ছিলেন কর অঞ্চল-১-এর কর কমিশনার মো. ইকবাল বাহার, কর অঞ্চল-২-এর কর কমিশনার সামিয়া আখতার, কর অঞ্চল-৩-এর কর কমিশনার মো. শাহাদাৎ হোসেন শিকদার ও কর অঞ্চল-৪-এর কর কমিশনার ছাবিনা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কর আপিল অঞ্চলের কমিশনার (আপিল) সফিনা জাহান।
অনুষ্ঠানে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, একসময় নারীরা ছিলেন অবহেলিত। নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলেন। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। সব ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। নারীরা সেরা করদাতার পুরস্কার পাচ্ছেন। এটি নিঃসন্দেহে আনন্দের, গর্বের। মেয়র আরও বলেন, কর দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। দেশে এক থেকে দেড় কোটি ব্যবসায়ী আছেন। কিন্তু সবাই কর দেন না। তাই কর দিতে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বোচ্চ কর দিয়ে এবার শীর্ষ করদাতা হয়েছেন বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলের (বিএসআরএম) চেয়ারম্যান আলী হোসাইন আকবর আলী। দ্বিতীয় শীর্ষ করদাতা হয়েছেন পেডরোলো গ্রুপের চেয়ারম্যান নাদের খান, তৃতীয় শীর্ষ করদাতা আবু মোহাম্মদ। এ ছাড়া সর্বোচ্চ কর দেওয়া নারী করদাতা হয়েছেন শামিম হাসান। তরুণ করদাতা শ্রেণিতে সর্বোচ্চ কর দাতার সম্মাননা পেয়েছেন মোহাম্মদ মুমিনুল হক।
এর বাইরে চট্টগ্রাম জেলায় দীর্ঘ সময় ধরে কর দিয়ে সম্মাননা পেয়েছেন সৈয়দ মো. হাবিব উল্লাহ, মো. নাছির উদ্দিন ভূঁঞা। সর্বোচ্চ করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ ইলিয়াছ, লিয়াকত আলী ও শেখ জিয়াউল হক। মহিলা শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন রোকেয়া বেগম এবং তরুণ করদাতা শ্রেণিতে সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী সাফায়াত জামান খান।
খাগড়াছড়ি জেলায় দীর্ঘ সময় কর দিয়ে সম্মাননা পেয়েছেন মো. সোলায়মান ও প্রিয়দর্শী বড়ুয়া। এ জেলায় সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পাওয়া তিনজন হলেন এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা, মো. নূর আলম ও আবু জাহের। মহিলা শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন মোসাম্মত ফরিদা আক্তার এবং তরুণ করদাতা শ্রেণিতে সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন মো. আবুল কালাম ভূঁইয়া।
রাঙামাটি জেলায় দীর্ঘ সময় ধরে কর দিয়ে সম্মাননা পেয়েছেন মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ ও মো. ইসহাক মিয়া। আর সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন লোকমান হোসেন তালুকদার, মো. রফিকুল আলম ও শোভন ধর। মহিলা শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন সুইটি আক্তার, আর তরুণ শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন মো. তরিকুল ইসলাম।
বান্দরবান জেলায় দীর্ঘ সময় ধরে কর দিয়ে সম্মাননা পেয়েছেন আবুল কাশেম সওদাগর ও নিখিল কান্তি দাশ। আর সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন আবদুশ শুক্কর, অমল কান্তি দাশ ও মোহাম্মদ ইসলাম। সর্বোচ্চ নারী করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন হুরে জান্নাত হুরাইন এবং তরুণ শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন সায়েদ হোসেন মো. জুয়েল।
কক্সবাজার জেলায় দীর্ঘ সময় ধরে কর দিয়ে সম্মাননা পেয়েছেন বুলু বিকাশ দাশ ও আ. আ. মো. আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী। এ জেলা থেকে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন মোহাম্মদ আয়ুব, মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলমগীর। সর্বোচ্চ নারী করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন পুষ্প রানি দাস এবং তরুণ শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পেয়েছেন ওমর ফারুক।