সরকারি-বেসরকারি ৩৮ ধরনের সেবা নেওয়া আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছর থেকে ৩৮ ধরনের সেবা নিতে করদাতাদের রিটার্ন জমার রসিদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়। আসছে বাজেটে এ বিধান আরও কঠোর করা হচ্ছে। করযোগ্য আয় থাকুক আর না-ই থাকুক, ন্যূনতম ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কর দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। ন্যূনতম এ কর না দিলে মিলবে না সরকারি-বেসরকারি ৩৮ সেবা।
আগামী ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। সেখানে এই প্রস্তাব দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। কারণ, আয়কর অধ্যাদেশের সঙ্গে বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, নতুন প্রস্তাব পাস হলে করমুক্ত আয়সীমার নিচে আয় থাকলেও নির্ধারিত সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সব সেবাগ্রহীতাকেই ন্যূনতম কর দিতে হবে। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা যাঁরা গ্রহণ করেন, তাঁদের আয় করমুক্ত আয়সীমার বেশি বলে ধরে নিয়েই নতুন এই ব্যবস্থা চালুর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে করমুক্ত আয়সীমা বার্ষিক তিন লাখ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হতে পারে।
এবার দেখা যাক, কোন কোন সেবা নিতে রিটার্ন জমার প্রমাণ লাগবে। এসব সেবার মধ্যে অন্যতম হলো ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ আবেদন; ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে; ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার ক্ষেত্রে; কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারধারী হতে হলে; ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য হতে গেলে; কারও সন্তান বা পোষ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে; অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে। কোনো করদাতা ন্যূনতম কর না দিলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সেবা দিতে পারবে না বলে জানা গেছে। আগামী অর্থবছরে সেবার এ তালিকা আরেকটু বড় করা হতে পারে বলে এনবিআর সূত্রে জানা যায়।
ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটরের দেশীয় উৎপাদকদের জন্য সুখবর আসছে আগামী বাজেটে। এসব উৎপাদকের জন্য উৎপাদন পর্যায়ে রেয়াতি হারে ভ্যাট-সুবিধা আরও এক বছর অব্যাহত রাখতে পারে সরকার। ফলে ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটরের দেশীয় উৎপাদকেরা আগের মতোই প্রতিযোগিতাসক্ষম থাকবে।
বর্তমানে ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটরের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ আছে। এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুন। এই মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। মূলত দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বাজেটে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দেশে উৎপাদিত মুঠোফোনের ওপর ভ্যাট বাড়তে পারে। ফলে মুঠোফোনের দামও বেড়ে যেতে পারে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে দেশীয় কোম্পানির মুঠোফোন উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিন স্তরে ভ্যাট বসতে পারে। যেমন যেসব প্রতিষ্ঠান যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নিজেরাই বানাবে এবং মুঠোফোন উৎপাদন করবে, সেসব কোম্পানির ওপর ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট বসতে পারে।
যেসব প্রতিষ্ঠান মুঠোফোন সংযোজন করে, তাদের ক্ষেত্রে দুইভাবে ভ্যাট আরোপ হতে পারে। যেমন কমপক্ষে দুটি যন্ত্রাংশ নিজেরা বানিয়ে মুঠোফোন বানালে এখন ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। তা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। অন্যদিকে যারা সব যন্ত্রাংশ আমদানি করে শুধু দেশে সংযোজন করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর সাড়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট বসতে পারে। এখন ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ আছে।
এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের মুঠোফোন উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদার বেশির ভাগ জোগান দেয়। এখন ধীরে ধীরে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। তাই ভ্যাটের পরিমাণ কিছুটা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় ব্যবসায় পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে মুঠোফোনের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। আগামী অর্থবছর থেকে দাম আরও বাড়তে পারে।
দেশে এখন ১৪টি প্রতিষ্ঠান মুঠোফোন উৎপাদন করছে। দেশে বছরে স্মার্টফোনের চাহিদা এক কোটির মতো। এখন পর্যন্ত এ চাহিদার বড় অংশেরই জোগান দেয় দেশে মুঠোফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে স্যামসাং, অপো, ভিভো, টেকনো, সিম্ফনি, ওয়ালটন, লাভা, শাওমি, নকিয়া, রিয়েলমি।