অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা বদলে যাচ্ছে

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা বদলে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ব্যয়সাশ্রয়ী নীতির কারণে কয়েক মাস আগে এডিপির প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার তালিকা করেছে সরকার।

এখন এডিপি সংশোধন করার সময় সেই তালিকাটিও সংশোধন করা হচ্ছে। নতুন উদ্যোগে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাই ঠিক করবে কোন কোন প্রকল্প অগ্রাধিকার তালিকায় রাখবে। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। চলতি মাসেই তা চূড়ান্ত করা হবে। আগামী মাসে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি পাস করা হবে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বর্তমানে এডিপিতে ১ হাজার ৩৬৩টি প্রকল্প আছে। অর্থনীতির এই চাপের কারণে কয়েক মাস আগে এই প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ শ্রেণিতে ভাগ করেছে সরকার। ‘এ’ শ্রেণির প্রকল্পকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মানে, এসব প্রকল্পে চলতি এডিপিতে যা বরাদ্দ আছে, তা পুরোটাই খরচ করা হবে। ‘বি’ শ্রেণির প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ (দেশজ উৎসের অর্থ) ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। ‘সি’ শ্রেণির প্রকল্পগুলোকে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে।

যেসব মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, তারাই বুঝবে, কোন প্রকল্পগুলো জরুরি। এ ছাড়া বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়ও অগ্রাধিকার সংশোধন করা দরকার। সার্বিকভাবে এসব বিবেচনায় অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে।
শামসুল আলম, প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

বর্তমানে ৬৪৬টি প্রকল্প ‘এ’ শ্রেণিতে; ৬৩৬টি প্রকল্প ‘বি’ শ্রেণিতে এবং ৮১টি প্রকল্প ‘সি’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এর বাইরে এডিপিতে আরও নয়টি প্রকল্প রয়েছে, যেগুলোকে কোনো শ্রেণিতে রাখা হয়নি।

প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণির তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে করা হয়েছিল। তখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলেছিল, এই তালিকা ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হলে চলতি বছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাঁচবে।

গত জানুয়ারি মাসের মধ্যভাগে এসে এডিপি সংশোধনের সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় যে অগ্রাধিকারের এই তালিকা সংশোধন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশোধিত এডিপিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক যে বরাদ্দ দেবে, সেই বরাদ্দ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো অগ্রাধিকার প্রকল্প ঠিক করবে। যেমন কোনো মন্ত্রণালয়ের ২০ শতাংশ বরাদ্দ কমিয়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিল অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই মন্ত্রণালয়ের যদি ১০টি প্রকল্প থাকে, তাহলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঠিক করবেন কোন প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণিতে রাখবেন।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব মন্ত্রণালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, তারাই বুঝবে, কোন প্রকল্পগুলো জরুরি। এ ছাড়া বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়ও অগ্রাধিকার সংশোধন করা দরকার। সার্বিকভাবে এসব বিবেচনায় অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, চলতি মাসের মধ্যেই সংশোধিত প্রকল্প চূড়ান্ত করা হবে।

গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশোধিত এডিপি নিয়ে বৈঠক করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সেখানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অগ্রাধিকার প্রকল্প বাছাই করতে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন কৃষি, কৃষিজাত শিল্প, বিদ্যুৎ খাত, দারিদ্র্য বিমোচন—এসব খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে।

এ ছাড়া যেসব প্রকল্প চলতি অর্থবছরে শেষ হবে, তা বরাদ্দ নিয়ে শেষ করতে হবে। বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প কম অগ্রাধিকারে রাখা যাবে না। চলতি মাসের মধ্যেই মন্ত্রণালয়গুলো কোন কোন প্রকল্পকে অগ্রাধিকারে রাখছে, তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগকে জানাতে হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী সংশোধিত এডিপি সাজাবে।

নিজস্ব টাকা কমবে না, কমবে বিদেশি সহায়তা

চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে এডিপির আকার ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশজ উৎস থেকে দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৬ কোটি টাকা। আর বিদেশি সহায়তা হিসেবে রাখা আছে ৯২ হাজার ২০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা নিজেরা জোগান দেবে।

সম্প্রতি সংশোধিত এডিপিতে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বিদেশি সহায়তা কমানোর বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। তাতে সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার দেশজ উৎসের বরাদ্দ করা অর্থ না-ও কমতে পারে। কারণ, বিদেশি সহায়তার অর্থ খরচে নানা ধরনের শর্ত থাকে। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো দেশজ উৎসের অর্থ খরচেই বেশি আগ্রহী হয়।