একনেক সভায় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, দোলাচলের মধ্যেও অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে।
আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলার। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় বছরে দেশের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। এ প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে নামলেও ২০৪০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করবে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ হলে এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যেই ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যানের বরাতে গত ২৯ ডিসেম্বর কানাডার অনলাইন প্রকাশনা সংস্থা ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট যে প্রতিবেদন করেছে, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দেখানো হয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার। তাতে বিদায়ী বছরে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৫তম।
শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেক সভা শেষে এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সামনে সংক্ষিপ্ত আকারে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।’
একই অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘যতই মন্দার পূর্বাভাস দেওয়া হোক না কেন, মন্দার ঢেউ আমাদের ওপর খুব একটা লাগবে না। বাংলাদেশ মন্দায় পড়ার শঙ্কায় থাকা দেশগুলোর তালিকায় নেই। অর্থনীতির প্রায় সব সূচক ভালো অবস্থায় আছে।’
এদিকে প্রবাসী আয় ও রিজার্ভ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলে দাবি করা হলেও দেশে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) ও অন্যান্য প্রয়োজনে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।
রিজার্ভ নিয়ে গতকাল উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংগত কারণেই চাপে থাকলেও ধীরে ধীরে তা সামাল দিয়ে উঠছে বাংলাদেশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে প্রবাসী আয়ও আগের মাসের তুলনায় ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। সরকারের প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ ও কৌশলের কারণে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে। তাতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে। গত ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ডলার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে, কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থনীতির চাপ সামলাতে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বাজেট সহায়তা চেয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা সরকারি সংস্থার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছেও এসব তথ্য আছে।’ তিনি আরও বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশ অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়, এটি কমাতে হবে।