মাতারবাড়ী প্রকল্পে ১৬০০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি জাইকার

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র
 ছবি : প্রথম আলো

মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে (৭ম পর্বে) প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি বা জাইকা। আজ শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত ঋণচুক্তি করেছে জাইকা। জাইকার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চুক্তির আওতায় মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ারড পাওয়ার প্রজেক্টের সপ্তম ধাপের জন্য বাংলাদেশকে মোট ২ লাখ ১৭ হাজার ৫৫৬ কোটি জাপানি ইয়েন ঋণ দেবে জাইকা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। ঋণচুক্তিতে সই করেন জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি বা চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদে ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।

মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ১৮ মিটার গভীরতা সমৃদ্ধ দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরও গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে কয়লা পরিবহনের জন্য গভীর সমুদ্রবন্দরটির নকশা করা হয়েছিল। পরে জাইকার সহযোগিতায় গভীর এ সমুদ্রবন্দরকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জাইকা জানিয়েছে, ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের ইউনিট-১ থেকে এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এই ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট। আগামী জানুয়ারি থেকে ইউনিট ১ ও জুলাই থেকে ইউনিট ২-এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটেরও উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট।

জাইকা বলছে, জ্বালানি উৎসের বৈচিত্র্যকরণ ও বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে ভূমিকা পালনে মাতারবাড়ী প্রকল্পে ঋণ বাড়ানো হয়েছে। মাতারবাড়ী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন, রাস্তা এবং সেতু নির্মাণ উদ্যোগ। প্রকল্পটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। যেমন বৈদ্যুতিকীকরণ; স্কুল, হাসপাতাল, খেলার মাঠ ও রাস্তা নির্মাণ; কর্মসংস্থান তৈরি ও জীবিকা উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

এ ঋণের সুদহার হবে বার্ষিক ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এর সঙ্গে পরামর্শমূলক পরিষেবার জন্য শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হারে সুদ যুক্ত হবে। ৩০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাইকার বাংলাদেশ প্রধান ইচিগুচি তোমোহিদে বলেন, মাতারবাড়ী প্রকল্পটি শুধু টেকসই ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা সুরক্ষিত করবে না, বরং জ্বালানি উৎসের বৈচিত্র্য সৃষ্টিতেও এটি সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উভয় ক্ষেত্রেই প্রবেশদ্বার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হতে সাহায্য করবে।

মাতারবাড়ীতে ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নিয়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ বহন করছে জাইকা।