আইএলওর প্রতিবেদন

বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায়

  • বাধ্যতামূলক বাণিজ্যিক যৌন শোষণ থেকে মাথাপিছু সর্বোচ্চ ২৭,২৫২ ডলার মুনাফা হয়।

  • ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে সৃষ্ট মুনাফা ৬,৪০০ কোটি ডলার বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও)

অনুন্নত ও উন্নয়নশীল থেকে নয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনেই দেখা যাচ্ছে, সারা পৃথিবীতে বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে যে অবৈধ মুনাফা অর্জিত হয়ে থাকে, তার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোয়। এর পেছনেই রয়েছে আমেরিকা অঞ্চল।

আইএলওর প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বে প্রতিবছর বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে বছরে ২৩৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের মুনাফা অর্জিত হয়। এর মধ্যে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো অর্জন করে সর্বোচ্চ ৮৪ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৪২০ কোটি মার্কিন ডলার। এরপরের অবস্থানে থাকা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এ ধরনের মুনাফার অর্জিত হয় ৬২ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ২৪০ কোটি ডলার।

আমেরিকা অঞ্চলে এই মুনাফার পরিমাণ এখন ৫২ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ২১০ কোটি ডলার। আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলো বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে ১৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৮০ কোটি ডলার এবং মধ্যপ্রাচ্যের, তথা আরব দেশগুলো ১৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার মুনাফা করে থাকে।

আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে সৃষ্ট বার্ষিক মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৬ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।

আইএলও ‘প্রফিটস অ্যান্ড পভার্টি: দ্য ইকোনমিকস অব ফোর্সড লেবার’ বা ‘মুনাফা ও দারিদ্র্য: বাধ্যতামূলক শ্রমের অর্থনীতি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে যেসব মানুষ বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে বাধ্য হন, তাঁদের মাথাপিছু মুনাফার হিসাব তুলে ধরেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, মাথাপিছু অবৈধ মুনাফা অর্জনের দিক থেকে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

এই দুই অঞ্চলের দেশগুলোর বার্ষিক মাথাপিছু অবৈধ মুনাফার পরিমাণ ২১ হাজার ২৪৮ ডলার। তালিকায় এরপর রয়েছে আরব দেশগুলো, যেখানে মাথাপিছু মুনাফা ২০ হাজার ৩১৮ ডলার। আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোয় মাথাপিছু অবৈধ মুনাফা ১৫ হাজার ১১৯ ডলার, আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোয় ৫ হাজার ৮৭৯ ডলার ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে ৫ হাজার ১৯৯ ডলার।

বিশ্বের কোন অঞ্চলে কত মানুষ বাধ্যতামূলক শ্রম দেন, সেই হিসাবও দেখিয়েছে আইএলও। তাতে দেখা যায়, সবার আগে রয়েছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো। ২০২২ সালে এই দুটি অঞ্চলের ১৫ দশমিক ১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ বাধ্যতামূলক শ্রম দিতেন। আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোয় এই সংখ্যা ছিল ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন বা ৩৮ লাখ; আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোয় ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন বা ৩৬ লাখ; ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোয় ৪ দশমিক ১ মিলিয়ন বা ৪১ লাখ। এ ছাড়া আরব দেশগুলোতে শূন্য দশমিক ৯ মিলিয়ন বা ৯ লাখ মানুষ বাধ্যতামূলক শ্রম দেন।

এই বাধ্যতামূলক শ্রমের বড় অংশই বেসরকারি অর্থনীতিতে নিয়োজিত। আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে সৃষ্ট বার্ষিক মুনাফার পরিমাণ ২৩৬ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০১৪ সালের পর এই বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে সৃষ্ট মুনাফার পরিমাণ ৬৪ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বা ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।

আইএলও বলছে, বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে সৃষ্ট মুনাফা এভাবে নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো, বাধ্যতামূলক শ্রমে নিযুক্ত মানুষের সংখ্যা এবং এই বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকার মানুষপ্রতি মুনাফা বেড়েছে।

আইএলওর প্রতিবেদন অনুসারে, অপরাধী ও মানব পাচারকারীরা জনপ্রতি প্রায় ১০ হাজার ডলার মুনাফা করছে; এক দশক আগেও যা ছিল ৮ হাজার ২৬৯ ডলার। বাধ্যতামূলক শ্রম থেকে যে মুনাফা হচ্ছে, তার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসছে বাধ্যতামূলক বাণিজ্যিক যৌন শোষণ থেকে, যদিও সংখ্যার দিক থেকে এই নারীরা খুব বেশি নন, মোট বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে বাধ্য হওয়া মানুষের মাত্র ২৭ শতাংশ। যৌন শোষণ থেকে মাথাপিছু মুনাফা অনেক বেশি; এ ক্ষেত্রে মাথাপিছু মুনাফা হয় ২৭ হাজার ২৫২ ডলার, অন্যান্য ক্ষেত্রে যার পরিমাণ ৩ হাজার ৬৮৭ ডলার।