ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২

দেশে দারিদ্র্যের হার এখন ১৮.৭%

কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। দারিদ্র্যের হার এখন ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এ এই তথ্য উঠে এসেছে।

ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

একই সঙ্গে, দেশে অতি দারিদ্র্যের হারও কমেছে। ২০২২ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দেশে অতি দারিদ্র্যের হার এখন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।

আজ দুপুরে বিবিএস আনুষ্ঠানিকভাবে খানা আয় ও ব্যয় জরিপের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করবে।

কোভিড পরবর্তীসময়ে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসের এই চিত্র আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন বিবিএসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিবিএস মনে করে, দারিদ্র্য বিমোচনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে দেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও দারিদ্র্য হার কমার কথা জানিয়েছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের এই তথ্য দেন। তিনি জানান, দারিদ্র্য পরিমাপের জন্য খানা আয় ও ব্যয় জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। আজ বুধবার জরিপের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীকে দারিদ্র্য কমার খবর দেওয়া হয়েছে। এই খবর শুনে প্রধানমন্ত্রী খুব খুশি হন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপের মাধ্যমে দারিদ্র্য কমল কি না, তা দেখে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপে দেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর পরের তিন বছরের দারিদ্র্য কমার প্রবণতা ধরে বিবিএস আরেকটি হিসাব করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ পর্যন্ত দারিদ্র্য কমে সাড়ে ২০ শতাংশ হয়েছে। বিবিএসের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ অনুযায়ী পরের তিন বছরে দারিদ্র্যের হার আরও কমেছে। তবে দারিদ্র্যের হার এখনো ১৫ শতাংশের ওপরে আছে।

আগামী অর্থবছরের পরের অর্থবছরে নারীর কাজের হিসাব জিডিপিতে দেখাতে পারব। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেশ আগ্রহ আছে।
এম এ মান্নান, পরিকল্পনামন্ত্রী

এবারের খানা আয় ও ব্যয় জরিপে সারা দেশে ১৪ হাজার ৪০০ পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরব্যাপী এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

নারীর গৃহকর্মকে জিডিপিতে আনার উদ্যোগ

নারীর মজুরিহীন গৃহকর্মকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (বিআইডিএস) গবেষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গতকাল তিনি এই তথ্যও দেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নারীর এ ধরনের কাজের অবদান অর্থনীতিতে হিসাব করা হয় না। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে আমরা জিডিপির আকার যা দেখছি, প্রকৃত অর্থে এর চেয়ে বেশি জিডিপির আকার। মায়ের রান্না, ভালোবাসাকে হয়তো মূল্যায়ন করতে পারব না। অন্য কাজগুলো যেন মূল্যায়ন করা হয়, সে জন্য বিআইডিএসকে গবেষণা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। আগামী অর্থবছরের পরের অর্থবছরে নারীর কাজের হিসাবটি জিডিপিতে দেখাতে পারব। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেশ আগ্রহ আছে।’

এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘আজকের (গতকাল) একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি এমন চাকরি, যার কর্মঘণ্টা নেই, ছুটি নেই, কোনো বিশ্রামও নেই, বেতন নেই, পেনশন নেই।’

এর আগের একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী নারীর মজুরিহীন কাজকে জিডিপিতে আনার উপায় খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এদিকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম সাংবাদিকদের জানান, এখন যে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে জিডিপির হিসাব করা হয়, তাতে কাজের বাজারমূল্য না হলে জিডিপিতে যুক্ত হবে না। এই পদ্ধতি আমাদের নিজস্ব নয়। নারীর মজুরিহীন গৃহকর্মকে হিসাবে আনতে পারলে জিডিপির আকার বড় হতো। তিনি একটি উদাহরণ দেন, ‘বাসায় আমার স্ত্রী এক পাতা টাইপ করে দিলে কোনো পয়সা দিতে হয় না। কিন্তু সেই এক পাতা যদি বাজারে গিয়ে করতে হয়, তার জন্য খরচ করতে হবে। তা জিডিপিতে যোগ হবে।’

শামসুল আলমের মতে, স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এই হিসাব করা যায়। একজন নারী বাসাবাড়িতে যে সাত-আট ঘণ্টা কাজ করেন, ওই সময়ে বাইরে কাজ করলে কত মজুরি পেতেন, তা দিয়ে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। তবে আশপাশের দেশে এভাবে নারীর মজুরিহীন কাজকে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করে না বলে জানান তিনি।

সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতির জন্য ‘নীল বন্ড’

একনেক সভায় ব্লু ইকোনমি তথা সমুদ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী এই অর্থনীতি আরও জোরদারে কর্মসূচি নেওয়ার তাগিদ দেন বলে জানান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি বিষয়ে একটি স্বাধীন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ গঠনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে একটি ‘ব্লু বন্ড’ ছাড়ার প্রস্তাবও করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে (জিইডি) একটি ডেলটা সেল করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য কাউসার আহাম্মদ বলেন, আট বছর আগে সমুদ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে।

রেমিট্যান্স কমতে পারে

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশে গত মার্চ মাসে ২০২ কোটি ডলারের মতো রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে। এটি স্বস্তির, কিন্তু সামনে তা কমতে পারে। ঈদের কারণে বাড়তি রেমিট্যান্স এসেছে। তিনি আরও বলেন, হাওর এলাকায় পানির প্রবাহ বাধা সৃষ্টি করে, তাই আর কোনো সড়ক নির্মাণ করা হবে না, এটি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। এ ছাড়া অনাথ শিশুদের কিছু শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে তারা কাজকর্ম করতে পারবে।

সারের মূল্যবৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, যেকোনো জিনিসের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে।