কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে বাংলাদেশের কর ব্যবস্থায় সাত ধরনের সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মঈনুল আহসান।
দেশে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হলে সরকারের অঙ্গীকার থাকতে হবে বলে মনে করেন কানাডার কনকরডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মঈনুল আহসান। তিনি বলেন, কর আদায় বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার থাকতে হবে। সেই সঙ্গে জনগণকে বিশ্বাস করাতে হবে যে করের টাকা ভালো কাজে ব্যয় হবে। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকলে করদাতারা বেশি কর দিতে উৎসাহ দেখান।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল শুক্রবার চতুর্থ লোক বক্তৃতায় সৈয়দ মঈনুল আহসান এসব কথা বলেন। এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।
সৈয়দ মঈনুল আহসানকে বিনায়ক সেন প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি ১৫-১৭ শতাংশ নিতে হলে কি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন আছে? এর জবাবে সৈয়দ মঈনুল আহসান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি আর্থিক খাতের উন্নতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।
কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হলে বাংলাদেশের কর ব্যবস্থায় সাত ধরনের সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন সৈয়দ মঈনুল আহসান। তিনি বলেন, এ দেশের অর্থনীতির ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে আসে। এই খাতকে করের আওতায় আনতে না পারলে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়বে না। আর্থিক খাতকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে কর আদায় বাড়ানো যায়।
এ ছাড়া ব্যক্তি ও করপোরেট কর ব্যবস্থায় সংস্কারের ওপর জোর দেন সৈয়দ মঈনুল আহসান। একই সঙ্গে তিনি ভ্যাট ব্যবস্থা পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। বলেন, ছয় বছর আগে ভারত ভ্যাটের পরিবর্তে জিএসটি প্রবর্তন করে এখন সুফল পাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশে কর-জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। সেই ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় হয়েছে। সেই ঋণের অনেকগুলো শর্তের মধ্যে একটি হলো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তি কর আদায় করতে হবে।
সৈয়দ মঈনুল আহসান বলেছেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত কম থাকার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষের আয় কম হওয়ায় কর আদায় কম হয়। তা ছাড়া প্রশাসনে দুর্নীতি রয়েছে। দক্ষতার অভাবও আছে।
বাংলাদেশের গত আট বছরের কর কাঠামো বিশ্লেষণ করেন কানাডার কনকরডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি বলেন, আট বছর আগে আদায় হওয়া রাজস্ব আয়ের মধ্যে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক (সিডি), সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও আয়করের যে হার বা হিস্যা ছিল, এখনো তা-ই আছে। যেমন গত আট বছর ধরে মোট রাজস্বে ভ্যাটের হিস্যা ৩৬-৩৮ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। যদিও দেশের অর্থনীতি আগের জায়গায় নেই। শিল্প খাত অনেক এগিয়ে গেছে।