আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচিকে নীতি সার্বভৌমত্বের ‘আত্মসমর্পণ’ বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, ‘আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা অন্তত কিছু নীতি সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ করেছি। আমরা তাদের শর্ত মেনে অর্থ নিয়েছি।’
আজ শনিবার ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে কর আদায়সংক্রান্ত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আইএমএফের অন্তত তিনটি শর্ত আজকের আলোচনার সঙ্গে মিল আছে। প্রথমত, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে। প্রতিবছর জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর আদায় করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কর ছাড় যৌক্তিক করা। এই দুটি শর্ত আদেশ দিয়ে করা যাবে। তৃতীয় শর্তটি হলো, কর আদায়ে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি। এটা আদেশ দিয়ে হবে না। এটা বিদ্যুতের দাম নয়, এটি সারের দাম নয়, আদেশ দিলাম, আর বেড়ে গেল।’
সিপিডির এই বিশেষ ফেলো মনে করেন, এসব শর্ত পূরণ করতে প্রতিষ্ঠানকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘এগুলো তো “গতকাল” করার কথা ছিল। আমরা তা পারিনি। এসব কাজ করাতে দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীরা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখন করতে হবে, এটাই বাস্তবতা।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, আইএমএফের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি সরকার অনুমোদন দিল। কিন্তু এ নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হলো না। এমনকি মন্ত্রিসভার অর্থনীতিবিষয়ক উপকমিটিতে আলোচনা হয়নি। স্থায়ী কমিটি কিংবা কেবিনেট সম্পৃক্ত ছিল না। জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা সই করলেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘বিদ্যুৎ-সারের দাম বেড়েছে, এর দায়িত্ব কে নেবে? জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের সংস্কার কীভাবে এগিয়ে যাবে?’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এবং নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত অংশীজন যাঁরা দেশের উন্নয়নকে তুলে ধরেছেন, আগামী দিনে ধারণ করবেন, তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে এই সংস্কার কার্যকর করা কষ্টকর হবে।’
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘মাঝে মাঝে বিদেশিরা এসে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। আমরা আধাখেঁচড়াভাবে হয়তো সংস্কার করব, কিন্তু তা সুষ্ঠু হবে না। তাঁর মতে, অংশীজনদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিকল্পনা দরকার, যাকে আগামী দিনে রাজনৈতিক উত্তরণের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। যাঁরা নির্বাচনে যেতে চান, তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ ধরনের সংস্কারের প্রতিফলন থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে এ খাত থেকে কর আদায়ে জোর দেন বক্তারা। তাঁদের মতে, কর দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া ফেসবুক, গুগল, আমাজনের মতো অনাবাসি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কর আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়া বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) পরিচালক হাবিবুল্লাহ নেয়ামুল করিম, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন, বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।