বাজেট ২০২৩–২৪

ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে 

রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে তারল্যসংকট তৈরি হয়। সরকারের ঋণের সুদ ব্যয় বেড়েছে।

ডলারের দাম ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ ব্যয় বেড়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল বৃহস্পতিবার আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী দেশে রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হবে জানিয়ে বলেন, প্রতি ডলারের দাম এখন ১০৮ টাকা ১০ পয়সা। পাশপাশি সুদহারের সীমা প্রত্যাহার ও ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার কাজ চলছে।

তারল্যসংকট

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। পাশাপাশি, রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন ও বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে আর্থিক হিসাবও নেতিবাচক অবস্থানে চলে এসেছে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের জুনের ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে কমে ২০২২ সালের জুনে ৪১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন হয়। রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে আরও কমে বর্তমানে ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার মূল্যমান কমেছে। ২০২২ সালের জুনে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ছিল ডলারপ্রতি ৯৩ টাকা ৫০ পয়সা। গত ২৪ মে বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ১০ পয়সা। 

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক চেষ্টায় বাজারে সাময়িক তারল্যসংকট তৈরি করে। এর প্রভাবে ব্যাংক উৎস হতে ঘাটতি অর্থায়নে সরকারের সুদ ব্যয় বৃদ্ধি পায়।  

সুদহার ও ডলারের দাম হবে বাজারভিত্তিক

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিলে আরোপ করা সুদহারের সীমা প্রত্যাহারের কাজ চলছে। একই সঙ্গে মার্কিন ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার কাজ চলছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, খেলাপি ঋণসহ আর্থিক খাতের অন্যান্য সীমাবদ্ধতা দূর করে ব্যাংক খাতের উন্নয়নে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী বিভিন্ন পদ্ধতিগত নির্দেশিকা তৈরি করছে, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। করোনা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতির ফলে তখন যেসব ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আর্থিক খাতে সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে।

বাড়বে রিজার্ভ 

অল্প সময়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়তে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে ডলারের ওপর চাপ কমাতে আমদানি কমানো, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

মুস্তফা কামাল বলেন, মুদ্রা বিনিময়ের হার ক্রমান্বয়ে বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে বিদ্যমান একাধিক মুদ্রার বিনিময় হারের মধ্যে ব্যবধান ন্যূনতম পর্যায়ে আনা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠাতে উৎসাহ দিতে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান এবং সহজে রেমিট্যান্স পাঠানোর উপযোগী মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসসহ (এমএফএস) অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশি ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে সব ফি মওকুফ করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের প্রভাবে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি আয় বাড়ানোর উপযোগী কার্যক্রম বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক অর্থায়ন ছাড়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।