গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ভারত।
বাংলাদেশ থেকে গত বছর বিদেশে প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ গেছে ভারতে। বিদেশে বিনিয়োগ হওয়া মোট অর্থের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি গেছে প্রতিবেশী দেশটিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ২০২৩ সালের বহির্মুখী সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৯৮ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা (ডলার বিনিময় মূল্য ১১০ টাকা হিসাবে)।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ভারত। দেশটিতে এ সময় ২ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় ২৩১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা। সে হিসাবে এক বছরে বিদেশে বিনিয়োগের প্রায় ৭০ দশমিক ৪৫ শতাংশ অর্থই গেছে ভারতে।
বাংলাদেশ থেকে বহির্মুখী বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে এরপর ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), নেপাল, যুক্তরাজ্য ও হংকং। ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৮৯ লাখ ডলার ও নেপালে ৩৫ লাখ ডলারের নিট বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশিরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। ২০১৩ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় প্রথম সরকার বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়। পরে ২০১৫ সালে এ-সংক্রান্ত আইনে সংশোধন আনা হয়। সংশোধিত ওই আইনের আওতায় বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারা বিদেশে বৈধভাবে বিনিয়োগের অনুমতি নিতে পারেন। এখন পর্যন্ত এ রকম ১৭টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ২২টি দেশে বিনিয়োগ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট (গ্রস) বহির্মুখী বিনিয়োগ হয়েছে ৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার, যা এর আগের বছর ছিল ৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরে গ্রস এফডিআই ১৩ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে বহির্মুখী প্রকৃত (নিট) বিনিয়োগ ছিল ৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার, যা গত বছর কমে হয়েছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরে বিদেশে বাংলাদেশের নিট বিনিয়োগ কমেছে ৪৩ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত বছর বিদেশে বাংলাদেশিদের মোট বিনিয়োগ বাড়লেও নিট বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে। এর কারণ হলো, গত বছর বিদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে। যেমন গত বছর হংকংয়ে মোট ২ কোটি ২২ লাখ ডলার নতুন বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশিরা। বিপরীতে দেশটিতে থাকা বিদ্যমান বিনিয়োগ থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার প্রত্যাহার করা হয়। ফলে বছর শেষে দেশটিতে বাংলাদেশিদের নিট বহির্মুখী বিনিয়োগের পরিমাণ ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
২০২৩ সালে বিনিয়োগ করা দেশগুলো থেকে ৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার অর্থ প্রত্যাহার হয়েছে। দেশীয় বিনিয়োগকারীরা মুনাফা আকারে, আন্তকোম্পানি ঋণ হিসেবে বা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে এসব অর্থ ফেরত এনেছেন।
এদিকে বহির্মুখী নিট বিনিয়োগ কমায় গত বছর শেষে সার্বিকভাবে দেশের বহির্মুখী এফডিআইয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ কম।