একনেক বৈঠক

শেষ সময়ে প্রকল্প পাসের তোড়জোড়

গতকাল ২০টি নতুন প্রকল্প পাস ও ৫টির খরচ না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রীর এখতিয়ারে পাস আরও সাতটি প্রকল্প।

বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে এসে প্রকল্প পাসের ব্যাপক তোড়জোড় চলছে।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০টি নতুন প্রকল্প পাস ও ৫টি প্রকল্পের খরচ না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রীর এখতিয়ারে আরও সাতটি প্রকল্প পাস হয়েছে বলে একনেক সভাকে অবহিত করা হয়।

গতকাল পাস হওয়া নতুন প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই স্থানীয় পর্যায়ের। হাসপাতাল, সড়ক, সেতু, ভবন—এসব নির্মাণের প্রকল্পই বেশি। এর আগে গত ১৮ জুলাই একনেকের সভায় ১৫টি প্রকল্প পাস হয়। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর একনেকের পরবর্তী সভা।

একনেক সভায় এত প্রকল্প কেন উঠল, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, দুই মাসে সাত-আটটি একনেক হওয়ার কথা। কিন্তু হয়েছে মাত্র দুটি। তাই এবার বেশি প্রকল্প ওঠানো হয়েছে।

গতকাল পাস হওয়া ২০টি প্রকল্পে খরচ হবে ১৪ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে আসবে ১২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা ও বিদেশি সহায়তা হিসেবে মিলবে ১ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন হবে ৬১৯ কোটি টাকা।

গতকাল ঢাকার আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যেসব প্রকল্প পাস হলো

৪২০ কোটি টাকার স্মল হোল্ডার অ্যাগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট; ৮১৫ কোটি টাকার গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন; ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকার জলবায়ু ও দুর্যোগ সহনশীল ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা; ৩৭৮ কোটি টাকার মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় নলের চরে নির্মিত অবকাঠামো রক্ষায় প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়ন; ৩১৭ কোটি টাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় শুভাঢ্যাখাল পুনঃখনন এবং খালের উভয় পাড়ের উন্নয়ন ও সুরক্ষা; ৬৪ কোটি টাকার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম; ১৩০ কোটি টাকার বাগেরহাট কালেক্টরেটের নতুন ভবন নির্মাণ; ৬০৩ কোটি টাকার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু পার্ক আধুনিকায়ন; ৩১০ কোটি টাকার পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়ক থেকে মাদানী অ্যাভিনিউ পর্যন্ত সংযোগকারী দুটি সড়ক উন্নয়ন।

১২৭ কোটি টাকার সিলেট (তেলিখাল)-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কে ২৫তম কিলোমিটারে বড় ভাঙ্গা সেতু নির্মাণ; ৫১৪ কোটি টাকার মুন্সিগঞ্জ জেলার রামেরকান্দা-লাকিরচর সংযোগ সড়ক উন্নয়ন; ১ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট যশোর, কক্সবাজার, পাবনা ও আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ এবং জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ; ১৯৪ কোটি টাকার শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন: দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন; ৩৮৭ কোটি টাকার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ; ১৭৭ কোটি টাকার কক্সবাজার জেলার নারী ও যুবাদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্প।

১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকার পটুয়াখালী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা; ৫৭৯ কোটি টাকার অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৩; ৩ হাজার ৭৫১ কোটি টাকার উপজেলা পর্যায়ে ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন; ৬৮ কোটি টাকার রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জ শহর ও সংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ এবং ২৪৯ কোটি টাকার সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।

যেসব প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, সেগুলো হলো সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ; উল্লাপাড়া রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ; যাত্রাবাড়ী-ডেমরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা; নওগাঁ সড়ক বিভাগের একটি আঞ্চলিক ও দুটি জেলা সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করা এবং আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প।

মূল্যস্ফীতি কমানোর নির্দেশ

গতকাল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূল্যস্ফীতি এখন বড় বিষয়। এটি কমাতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি জোর করে কমানো যায় না। কার্যকর নীতি নিতে হবে। আমি ঝুঁকি নিয়ে বলতে পারি, চলতি আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি ২-৪ পয়েন্ট কমবে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাসপাতাল বানানোর প্রকল্প পাসের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, লোকবল নিয়োগ হয় না—এটা খুব বিরক্তিকর। এ বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। অবকাঠামো নির্মাণের সময় জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে। এ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর জন্য আবারও নির্দেশ দিয়েছেন।

সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেখা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের কারণে জলাবদ্ধতা হয়েছে। এই ধরনের প্রকল্প নেওয়ার সময় সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে।

এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’ এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, পানি সরে যাওয়ার জন্য নালার তলদেশ পাকা করা যাবে না। এ ছাড়া স্লুইসগেট তৈরির সময় সব দিক বিবেচনা করবেন। এ নিয়ে অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। এ ছাড়া দক্ষতা উন্নয়নের একটি প্রকল্পে কক্সবাজার এলাকায় সার্ফিং পেশাকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।