আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কিছু পণ্য রপ্তানির বিপরীতে শুল্ক বাবদ ৭০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে গেলে ব্যবসায়ীদের শুল্ক দিতে হয়, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করতে গেলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক দিতে হয়। এই শুল্কহার ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ। তা–ও সরকার যখন রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ চায়, তখন রপ্তানিতেও শুল্ক আদায় করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নিজেই চায় না এসব পণ্য খুব বেশি রপ্তানি হোক।
যেসব পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুল্ক আদায় করা হয়, সেগুলো হচ্ছে ধান-চালের তুষ (ব্র্যান), তুলা বর্জ্য, ইট ও ইটের সামগ্রী (বিল্ডিং ব্রিকস), বিভিন্ন ধরনের সিসা ইত্যাদি। পণ্যগুলো ভারত, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে রপ্তানি হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এসব পণ্য রপ্তানির বিপরীতে শুল্ক আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৬৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কিছুটা কমিয়ে ৬২ কোটি টাকা করা হয়। অর্থবছর শেষে প্রকৃত হিসাব পাওয়া যাবে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এই শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের তথ্য বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত আট অর্থবছরে রপ্তানি শুল্ক বাবদ সরকার মোট আয় করেছে ২৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই আয় হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া রপ্তানি শুল্ক বাবদ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২২ কোটি ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩১ কোটি টাকা আয় হয়েছে।
তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি শুল্ক থেকে সরকারের আয় হয়েছে সবচেয়ে কম, যা পরিমাণে মাত্র এক কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও কম আয় হয়েছে, পরিমাণ তিন কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খাত থেকে কোনো আয়ই হয়নি। তবে ২০১১-১২ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৬৭ কোটি টাকা।
রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে ব্যতিক্রমী কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার এটা করতে পারে। তবে এক অর্থবছরে এক কোটি, আরেক অর্থবছরে তিন কোটি টাকা যদি আদায় হয়, তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে বিষয়টা অত গুরুতর নয়।মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সিপিডি
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে বিল্ডিং ব্রিকস (ইট ও ইটের সামগ্রী) রপ্তানি করে বাংলাদেশ বছরে গড়ে এক কোটি মার্কিন ডলারের মতো আয় করে। আর ভারত ও মিয়ানমারে তুলা বর্জ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয় ২০ হাজার ডলারের মতো। এ ছাড়া সিসা রপ্তানি হয় মালয়েশিয়ায়, আর ধান-চালের খোসা বা তুষ (ব্র্যান) রপ্তানি হয় প্রধানত ভারতে।
এ নিয়ে মজুমদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ধানের খোসা (তুষ) দিয়ে জ্বালানি হয়। এটার রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক আরোপ করা আছে। অবশ্য এর পেছনে কারণও আছে। ব্যাপক হারে এ খোসা রপ্তানি শুরু হলে দেশে এটির দাম অনেক বেড়ে যাবে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশেই এসব কাঁচামালে মূল্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে। সে জন্য রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। রপ্তানিকারকেরা এ নিয়ে নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি। তেমনই একজন বলেন, কোনো মন্তব্য করলে শুল্ক আরও বাড়িয়ে দিতে পারে এনবিআর।
এসব পণ্য রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় শুল্ক আদায় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন ২০২২-২৩ অর্থবছরে তিন কোটি টাকা শুল্ক আদায় হয়েছে, অথচ ওই অর্থবছরে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৩ কোটি টাকা। সূত্রগুলো জানায়, বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত এনবিআর ও অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা কোনো রকম যোগ-বিয়োগ করে হিসাব মেলানোর জন্য কাজটি করে থাকেন। বাস্তবতার সঙ্গে তাই কোনো মিল থাকে না।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে ব্যতিক্রমী কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার এটা করতে পারে। তবে এক অর্থবছরে এক কোটি, আরেক অর্থবছরে তিন কোটি টাকা যদি আদায় হয়, তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে বিষয়টা অত গুরুতর নয়।
এক অর্থবছরে ১১৫ কোটি টাকাও আদায় হয়েছে, এ তথ্য জানালে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাহলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায়ের বিরাট ফারাকটাও চিন্তার বিষয়।