বিশ্বব্যাপী চলমান খাদ্যসংকট মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি সংস্থার যৌথ বিবৃতিতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান।
বর্তমানে বিশ্বের ৮২টি দেশের ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে।
২৫টি দেশের খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আছে, যারা বৈশ্বিক খাদ্য বাণিজ্যের ৮ শতাংশ রপ্তানি করে।
করোনাজনিত বিধিনিষেধ, মূল্যস্ফীতি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা তৈরি হয়েছে। এতে মারাত্মকভাবে জ্বালানি, খাদ্য ও সারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, বর্তমানে বিশ্বের ৮২টি দেশের প্রায় ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), ডব্লিউএফপি ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবিলায় বাণিজ্যবিষয়ক বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে শুক্রবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায় তারা। এতে সংস্থাগুলো বলেছে, বাণিজ্য বিধিনিষেধ তুলে নিলে পণ্য সরবরাহে বাধা ও দাম কমানো সম্ভব হবে। এর ফলে বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবিলা করা আরও সহজ হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা, ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক (ডিজি) এনগোজি ওকোনজো-আইওয়ালা, ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি ও এফএওর ডিজি কু ডঙ্গুর নামে যৌথভাবে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে পাঁচটি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের কারণে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের বাজার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশের খাদ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বৈশ্বিক খাদ্য বাণিজ্যে এসব দেশের হিস্যা ৮ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় বিশ্বব্যাপী সারের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
সংস্থাগুলো বিবৃতিতে বলেছে, বাণিজ্য প্রক্রিয়া সহজ করা এখন সময়ের দাবি। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যসংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। একই সঙ্গে তা খাদ্যসংকটকে আরও প্রকট করে তোলে। তাই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে খাদ্য ও কৃষির বৈশ্বিক বাজারের কার্যকারিতা ও প্রতিকূলতা মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পাশাপাশি তুলনামূলক সহজ পরিদর্শন ও নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য করা গেলে পণ্য সরবরাহে বাধা ও দাম কমবে। পাশাপাশি মানবিক উদ্দেশ্যে খাদ্য কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা। তাঁরা বলেন, উৎপাদন ও জলবায়ু-সহনশীল কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ালে খাদ্যসংকট আরও কমানো যেতে পারে।
বর্তমানে ইউক্রেনে সংঘাতের কারণে দেশটি থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি একপ্রকার বন্ধ রয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জুনের শুরুতে জানিয়েছিলেন, যুদ্ধের কারণে তাঁদের ২ কোটি ৫০ লাখ টন কৃষিপণ্য অবরুদ্ধ হয়ে আছে। রাশিয়ার বাধার কারণে ইউক্রেনীয় কৃষিপণ্য বহনকারী জাহাজগুলো চলাচল করতে পারছে না বলে অভিযোগ জানিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে রাশিয়া বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করছে। উল্টো ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণেই খাদ্যসংকট ও সার সরবরাহ নিয়ে সমস্যা বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, ইউক্রেনের শস্য ও সার সরবরাহের জন্য একটি কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
এদিকে কৃষ্ণসাগরে অবরোধের মুখে থাকা ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্য রপ্তানি পুনরায় চালু করতে সম্প্রতি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বৈঠকে বসেছিলেন ইউক্রেন, রাশিয়া, জাতিসংঘ ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা।আলোচনায় একটি সমঝোতা হয়েছে বলে দাবি করেছে তুরস্ক।আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে চূড়ান্ত একটি চুক্তি সই হতে পারে বলে জানান দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার।