শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন। গতকাল চট্টগ্রামের একটি হোটেলে
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন। গতকাল চট্টগ্রামের একটি হোটেলে

পুরোনো সিন্ডিকেটের বদলে নতুন সিন্ডিকেট চাই না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুযোগ যদি আমরা হারাই, আবার কোনো দিন খুঁজে পাব কি না, জানি না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশে গত ১০-১৫ বছরের অন্যতম একটি বিষয় হলো, কেমন করে আমলারা ব্যবসায়ী হয়ে গেলেন। আর ব্যবসায়ীরা কেমন করে রাজনীতিবিদ হয়ে গেলেন। অনেকে আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, ব্যবসায়ীরাই শুধু রাজনীতিবিদ হননি, রাজনীতিবিদেরাও ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন। এখন কোনটা বেশি, কোনটা কম; সেটি দেখার বিষয়। তবে একটা বড় কারণ হলো, যে যাঁর দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন।

আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি নগরের একটি তারকা হোটেলে এই সভার আয়োজন করে। এতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সম্প্রতি সিলেটে অনুষ্ঠিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওই আলোচনায় উঠে এসেছিল যে এত পরিবর্তনের পরও এখনো কোথায় যেন একটা ভীতি ও আস্থাহীনতা কাজ করে।

মতবিনিময় সভায় সমাজসেবী, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মী, শ্রমজীবী সংগঠন ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। সভায় নাগরিক সেবা, প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া না–পাওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগোষ্ঠীদের আত্মপরিচয়, পর্যটনের অভিঘাত, শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান ও দক্ষতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে উঠে আসে। এসব বিষয়ে অতিথিরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন এবং পরামর্শ দেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘চট্টগ্রামের আলোচনায় দুটি বিষয় উঠে এসেছে। একটি হলো পুরোনো সিন্ডিকেটের বদলে আমরা নতুন সিন্ডিকেট চাই না। রাজনীতির বদল করলাম না, শুধু রাজার বদল করে ফেললাম—এটা হতে পারে না। এক অত্যাচারীর বদলে আরেক অত্যাচারীকে আমরা বিকল্প হিসেবে দেখছি না।’

আলোচনার আরেকটি দিক উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সভায় উঠে এসেছে যে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। যাঁদের আইন প্রণয়ন করার কথা, তাঁরাও যুক্ত হয়েছেন। যাঁদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার কথা, তাঁরাও যুক্ত হয়ে গেছেন। আবার যাঁদের আইন প্রয়োগ করার কথা, তাঁরাও যুক্ত হয়ে গেছেন। এমনকি যাঁরা উর্দি পরেন, তাঁরাও যুক্ত হয়ে গেছেন। এতে বোঝা যায়, সামগ্রিকভাবে আমরা যে সমস্যার মোকাবিলা করছি, তার আয়তন ও ব্যাপ্তি কত ব্যাপক এবং গভীর। এটাই সুযোগ—এমন মন্তব্য করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এ সুযোগ যদি আমরা হারাই, আবার কোনো দিন খুঁজে পাব কি না, জানি না।’

‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে’

সভায় শিক্ষাবিদ মু. সেকান্দার খান বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দাম বাড়ার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

গবেষক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। নদীদূষণ, পাহাড় ও জঙ্গল কাটা, খাল-নালা ভরাট—এ ধরনের অনেক কিছুই জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী। এ জন্য যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর ব্যয় বেড়েছে দফায় দফায়।

ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমের আলীহুসাইন বলেন, দেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা প্রকট। লাইসেন্স পাওয়া থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনের কোনো সেবা নিতে গেলেও অনেক সময় চলে যায়। এ ছাড়া কোনো প্রকল্প নেওয়ার জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সভায় অন্য বক্তারা বলেন, সিটি করপোরেশন, সিডিএ ও ওয়াসাসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, বিচারহীনতা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্লিপ্ততার কারণে এসব ঘটেছে। সে জন্য দুর্নীতিবাজদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, ফেরদৌস আরা বেগম, ইমরান মতিন, কাজী ইকবাল, মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সেলিম রায়হান, শরমিন্দ নীলোর্মি। সভা আয়োজনে সহযোগিতা করে ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ’।