মিরপুর-৬ এলাকার একটি বস্তির বাসিন্দা ইউসুফ বিশ্বাস। আজ রোববার সকাল পৌনে ৭টায় তিনি এসে দাঁড়ান মিরপুর-২ এলাকার ওএমএসের একটি ট্রাকের লাইনে। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে শেষমেষ লাইনের পাশে বসে পরেন তিনি। তার দেখাদেখি দিনমজুর শাহজাহান মৃধাও লাইনে বসে পড়েন।
ইউসুফ বিশ্বাস বাসাবাড়িতে রংমিস্ত্রির কাজ করেন। কয়েক মাস আগে তিনি অটো দুর্ঘটনায় কোমরের হাড়ে ব্যথা পেয়েছেন। এ কারণে নিয়মিত কাজ করতে পারেন না তিনি। তাঁর মেয়ে পুঁথির মালা বিক্রি করে মাসে হাজার তিনেক টাকা আয় করেন। সব মিলিয়ে মাসে প্রায় ১৩-১৫ হাজার টাকায় চলে ইউসুফ বিশ্বাসের পাঁচ সদস্যের সংসার।
জানতে চাইলে প্রথম আলোকে ইউসুফ বিশ্বাস বলেন, আগে তো এ রকম লাইনে আসতাম না। কিন্তু অভাবের কারণে পড়ে দুই তিন মাস ধরে এখানে আসতে হচ্ছে। কোমরে ব্যথার জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। মাঝেমধ্যে বসে বিশ্রাম নিতে হয়।
গুদারাঘাট এলাকা থেকে মিরপুর-২ এলাকায় বাসাবাড়িতে কাজের জন্য আসেন খোদেজা বেগম। আজ সকালে দুই বাসায় কাজ শেষ করে এসে ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। পণ্য কিনে বিকেলে আরও দুই বাসায় কাজ করবেন। আগেও এক দিন ওএমএসের ট্রাক থেকে পণ্য কিনেছিলেন। খোদেজা বেগম বলেন, দোকানে কম দামে পাইলে কি আর এখানে আইতাম? মানুষের বাসায় কাজ করে খাই। সেই কাজ ফেলে এখানে আসতে হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। তবে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় দিন দিন ওএমএসের পণ্য কিনতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে ইউসুফ বিশ্বাস ও খোদেজা বেগমদের মতো লোকের সারি।
সরকার ওএমএসের মাধ্যমে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকায় বিক্রি করে। আর প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকায়, আর ২ কেজির প্যাকেটজাত আটা ৫৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল এবং পাঁচ কেজি খোলা আটা বা চার কেজি প্যাকেটজাত আটা কিনতে পারেন। মূলত, নিম্নবিত্তের জন্য এসব পণ্য বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিককালে লাইনে নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষজনকে দেখা যাচ্ছে।
মিরপুর-২ এলাকায় আজ সকালে ওএমএসের ট্রাকের লাইনে দাঁড়ান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের একজন অফিস সহকারী। তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। সরকারি এই কর্মচারী জানান, বাজারে আটার দাম বেড়ে যাওয়ার পর গত দুই মাস যাবৎ ওএমএসের ট্রাক থেকে পণ্য কিনছেন তিনি। প্রতি রোববার দুই ঘণ্টার জন্য ছুটি নিয়ে এসে লাইনে দাঁড়ান। বললেন, এখানে দুই কেজি আটার প্যাকেট কিনতে পারি ৫৫ টাকায়, বাজারে যার দাম ১৫০ টাকা। নিরুপায় হয়েই এখানে আসি।’ আরও বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মচারীও ওএমএসের ট্রাক থেকে পণ্য কিনেন বলে জানালেন তিনি।
মিরপুর এলাকায় ওএমএসের পণ্য বিক্রি তদারক করা খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, ছয় মাস আগেও এত গ্রাহক ছিল না। তবে ইদানীং প্রতিবারেই বিক্রির সময় মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, আগে ট্রাকে করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাল নিয়ে বসে থাকলেও শেষ হতো না। আর এখন সর্বোচ্চ তিনটার মধ্যে সব পণ্য বিক্রি হয়ে যায়।
এদিকে মানুষের চাহিদা বাড়ায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ঢাকার মধ্যে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির (ওএমএস) স্থানসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে আরও ২০টি স্থানে প্রতিদিন ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি করবে সরকার। একটি স্থানে প্রতিদিন ওএমএসের দুই হাজার কেজি চাল ও এক হাজার কেজি আটা বিক্রি করেন পরিবেশকেরা।
জানতে চাইলে ওএমএসের দায়িত্বে থাকা ঢাকা রেশনিং দপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুন বলেন, আগে তো এত লোক হতো না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিক্রির জন্য চাল ও আটা বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানব।