দেশের বাজারে পণ্যমূল্য

যুদ্ধের প্রভাবে দেশের বাজারে দাম চড়া

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে কাঁটায় কাঁটায় ছয় মাস হলো। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ যুদ্ধ শুরু হয়। প্রতিবেশী দুই দেশের এই দ্বৈরথ সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। ফলে ইউরোপজুড়ে তৈরি হয় বড় ধরনের অস্থিরতা। সেই অস্থিরতার ধাক্কা এসে লাগে বাংলাদেশেও। রাশিয়ার তেল-গ্যাসের সঙ্গে ইউক্রেনের গমের ব্যবসায় দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। এতে দেশের বাজারে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে দুই দেশ ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার এক চুক্তি বিশ্ববাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা নিয়ে এলেও দেশের বাজারের অস্থিরতা এখনো পণ্যের দামে অস্থিরতা চলছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত ছয় মাসে দেশে চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, গুঁড়া দুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। যুদ্ধের এই ছয় মাসে মানভেদে চালের দাম কেজিতে সাড়ে তিন টাকা থেকে সর্বোচ্চ দশ টাকা বেড়েছে।

তবে এই ছয় মাসে আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে আরও অনেক বেশি। টিসিবির হিসাবে, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশের বাজারে খোলা আটার দাম ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা কেজি, যা এখন ৫০ থেকে ৫২ টাকা। সেই হিসাবে গত ছয় মাসে খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ১৬ টাকা। আর প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা। খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দার দামও বেড়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিকভাবে নিত্যপণ্যের বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে এ দেশেও। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও বন্যায় ফসলহানির প্রভাবও বাজারে পণ্যের দামে পড়েছে।

দেশে নিত্যপণ্যের মধ্যে গম ও মটর ডাল আমদানি হতো রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। এ ছাড়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামও অনেক বেড়ে যায়। তাতে পণ্যের দামে প্রভাব পড়ে। দুই দেশের যুদ্ধ শুরুর পর দেশ দুটি থেকে গম ও মটর আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে আটা-ময়দার দাম বেড়ে বেকারি পণ্যের দামও বেড়েছে। তখন বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হয়। তবে নিত্যপণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় বিশ্বের দেশে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। সব মিলিয়ে টালমাটাল হয়ে পড়ে আমদানিনির্ভর এ দেশের পণ্যবাজারও। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে।

দেশে বড় দানার মসুর ডালের দাম ছয় মাসের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আর মাঝারি ও ছোট দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে যথাক্রমে ২০ ও ১৫ টাকা। অ্যাংকর ডালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এই ডালের দাম কেজিতে ১২ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।

এ ছাড়া খোলা চিনির দামও বেড়েছে কেজিতে সাড়ে ১০ থেকে ১৩ টাকা। টিসিবির হিসাবে, ব্র্যান্ড ভেদে প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দামও কেজিতে বেড়েছে ৯০ থেকে ১২০ টাকা।