শীত পুরোপুরি জেঁকে বসার আগেই গুলিস্তানের ক্রীড়াসামগ্রীর দোকানগুলোয় বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন এ মৌসুমের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ব্যাডমিন্টনের সময়। রাজধানীর এই মার্কেটগুলোই দেশের সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম ব্যাডমিন্টন–সামগ্রীর বাজার। দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিক্রেতারা এখানে আসেন ক্রীড়াসামগ্রী কিনতে, খুচরাও বিক্রি করেন দোকানিরা।
ব্যাডমিন্টন–সামগ্রীর প্রায় পুরোটাই আসে চীন থেকে। এরপর তা বিক্রি হয় সমবায় টুইন টাওয়ার মার্কেট, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স এবং ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেটে। বাংলাদেশে ব্যাডমিন্টন মূলত একটি মৌসুমভিত্তিক খেলা, তাই শীত পড়তে শুরু করলেই র্যাকেট, শাটলকক ও অন্য সরঞ্জাম কেনার জন্য ক্রেতারা ভিড় জমান।
এক যুগের বেশি সময় ধরে সমবায় টুইন টাওয়ার মার্কেটে ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রি করেন মোহাম্মদ ইমরোজ। নিজেই ক্রীড়াসামগ্রী আমদানি করেন। তাঁর দোকানে ৫০০ থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা দামের ব্যাডমিন্টন র্যাকেট বিক্রি হয়। প্রথম আলোকে তিনি জানান, পাইকারি বাজার শুরু হয়েছে আরও প্রায় এক মাস আগেই। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন ৫ লাখ টাকা বিক্রি হলেও চলতি সপ্তাহে বিক্রি কিছুটা কমে ২–৩ লাখ টাকায় নেমেছে।
এখন ক্রীড়াসামগ্রীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ব্যাডমিন্টনের সরঞ্জাম। জানালেন মোহাম্মদ ইমরোজ। গত বছরের তুলনায় এবার র্যাকেটের দাম বেড়েছে। ইয়োনেক্স মাসল পাওয়ার ৮৮ প্রায় ১ হাজার ৯০০ টাকায়, আরএসএল র্যাকেট ২ হাজার ২০০ টাকায় এবং ভিক্টর ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের র্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি ডজন শাটলকক ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আর নেটের দাম পড়ছে প্রতিটি ৯০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।
মোহাম্মদ ইমরোজের মতো আরও কয়েক শ ব্যবসায়ী গুলিস্তানের দোকানগুলোয় ব্যাডমিন্টন–সামগ্রী বিক্রি করেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুধু শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে এসব সামগ্রী বিক্রি করেন তাঁরা। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে বুট এবং হ্যান্ডগ্রিপ, যা খেলার সময় ব্যবহার করা হয়। বছরের বাকি সময় বিক্রি হয় বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়াসামগ্রী যেমন ক্রিকেট ব্যাট, বল, জার্সি, ফুটবল।
শামীম স্পোর্টসে গিয়ে দেখা গেল সেখানে ভিড় উপচে পড়ছে, দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। মালিক মো. শামীমের কাছে পাওয়া গেল কিছুটা ভিন্ন চিত্র। তিনি জানান, তাঁদের বিক্রি চলতি সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিদিন তিনি প্রায় দুই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করছেন।
মো. শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এখানে ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের র্যাকেট বিক্রি হয়। ফেসবুকে পেজেই ক্রেতারা র্যাকেট পছন্দ করতে পারেন। এরপর ফোন করে বা মেসেজের মাধ্যমে র্যাকেট বুক করার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা অগ্রিম করতে হয়। পরে আমরা কুরিয়ারের মাধ্যমে র্যাকেট পাঠিয়ে দিই।’
ঢাকার বাজারে এখন বিভিন্ন দামের র্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেল, দাম নির্ভর করে মান ও ব্র্যান্ডের ওপর। যেমন ইয়োনেক্স অ্যাস্ট্রক্স ৯৯ বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায়, লি নিং টার্বো চার্জিং ৭৫ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়, ভিক্টর থ্রাস্টার কে ৮০০০ মডেলের দাম পড়ছে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়। এ ছাড়া মিজুনো ওয়েভ ফ্যাং আরএক্স ২ বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায় এবং অ্যাপাকস ভার্টুসো পারফরম্যান্স র্যকেট বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ৫ হাজার টাকায়। এসব র্যাকেট বেশি আসে চীন ও ভারত থেকে। ইয়োনেক্স তৈরি হয় জাপানে।
শরীয়তপুর থেকে মো. রাকিব এসেছিলেন ঢাকা ট্রেড সেন্টারে র্যাকেট কিনতে। তিনি বললেন, ফেসবুক পেজ দেখে তিনি র্যাকেট কিনতে এসেছেন, কারণ এখানে শতাধিক ডিজাইন থেকে পছন্দ করার সুযোগ রয়েছে। একটি মিজুনো র্যাকেট তিনি কিনেছেন ৫ হাজার টাকায়। সঙ্গে একটি গ্রিপ উপহার পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
গুলিস্তানের পাশাপাশি ঢাকার নিউমার্কেট ও আশপাশের কিছু দোকানে ক্রীড়াসামগ্রী বিক্রি হয়। নিউমার্কেটের মেসার্স ডি এম স্পোর্টসের মালিক মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন জানান, র্যাকেটের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে, ক্রেতারও চাপ রয়েছে। কম দামি র্যাকেটের চাহিদা বেশি। কারণ, এগুলোর দাম সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় ক্রেতারা সেদিকে বেশি ঝুঁকছেন।