প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, গত ২০ বছরে দেশের শীর্ষ ধনীদের সম্পদ ও আয়ের অনুপাত কিছুটা কমেছে।
১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ১০% ধনীর হাতে ছিল প্রায় ৬০% সম্পদ।
২০২১ সালে তাদের হাতে ছিল ৭০% সম্পদ।
২০২১ সালে বাংলাদেশের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীদের নিট আয় বৃদ্ধি পায়নি। ২০২০ সালে এই শ্রেণির মানুষের আয়ের পরিমাণ ছিল জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২১ সালে যা অপরিবর্তিত আছে।
একই সময়ে দেশের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর সম্পদের পরিমাণও অপরিবর্তিত আছে। ২০২০ সালে তাঁদের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ মোট জাতীয় সম্পদের ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২১ সালেও যা একই আছে।
প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, গত ২০ বছরে দেশের শীর্ষ ধনীদের সম্পদ ও আয়ের অনুপাত কিছুটা কমেছে। আবার একই সময়ে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে প্রায় সাড়ে সাত গুণ।
শীর্ষ ধনীদের আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি না পেলেও নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের সঙ্গে তাদের আয় ও সম্পদের ব্যবধান অনেক। যেখানে শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর আয় জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, সেখানে নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের আয়ের অনুপাত ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। সম্পদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর সম্পদের পরিমাণ যেখানে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখানে নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে তা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে গত ২৭ বছরে দেশের শীর্ষ ধনীদের আয় ও সম্পদের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। যেমন শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীদের হাতে সবচেয়ে বেশি আয় ছিল ১৯৯৫ সালে—মোট জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে এই আয় হ্রাসের হার তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। সম্পদের ক্ষেত্রেই একই চিত্র দেখা যায়—শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীদের হাতে সবচেয়ে বেশি সম্পদ ঘনীভূত ছিল ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২১ সালে যা নেমে এসেছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশে। অর্থাৎ এই শ্রেণির হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণও তেমন একটা কমেনি।
এদিকে ২০০০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির আকার বেড়েছে প্রায় সাড়ে সাত গুণ। শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর সম্পদ ও আয়ের অনুপাত কিছুটা কমলেও জিডিপির বহর যে হারে বেড়েছে, তাতে এই শ্রেণির মানুষের সঙ্গে বাকিদের বাস্তব ব্যবধান অনেকটাই বেড়েছে। তবে এই ২০ বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। অনেক মানুষের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে দেশে দৃষ্টিকটুভাবে বৈষম্য বেড়েছে।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত ১০ বছরে দেশের নারীদের শ্রম আয় অনেকটা বেড়েছে। ২০১০ সালে নারীদের শ্রম আয় ছিল মোট আয়ের ৬ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৯ সালে যা ১৬ দশমিক ৯ শতাংশে উঠে এসেছে। অর্থাৎ শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, যদিও কোভিডের অভিঘাতে অনেক নারী কাজ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
প্রতিবেদনের মুখবন্ধ লিখেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো। মুখবন্ধে তাঁরা বলেন, সঠিক নীতি করা হলে অসমতা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, আবার ভুল নীতির কারণে অসমতা লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে।
এ ক্ষেত্রে তাঁরা রোনাল্ড রিগ্যান ও মার্গারেট থ্যাচারের নব্য উদারনীতিবাদী (বেসরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধি) নীতির সমালোচনা করেছেন। এই নীতির ফলে ভারত ও চীনের প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে অসম দেশের একটি। সে জন্য যথাযথ নীতি প্রণয়নে গুরুত্ব দেন তাঁরা।
এদিকে বৈশ্বিক পরিসরেও দেখা যায়, শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীদের সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি। বিশ্বের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর আয় যেখানে মোট আয়ের ৫২ শতাংশ, সম্পদের ক্ষেত্রে যা ৭৬ শতাংশ। আর বিশ্বের নিচের সারির ২ শতাংশ মানুষের সম্পদে মোট সম্পদের মাত্র ২ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি তাঁর নতুন বই আব্রিফহিস্ট্রিঅবইকুয়ালিটিতে দেখিয়েছেন, গত শতকের শুরুতে ইউরোপে সবচেয়ে ধনী ১০ শতাংশের হাতে ছিল মোট সম্পত্তির প্রায় ৯০ শতাংশ।
২০২০ সালে অনুপাতটা দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশের কিছু বেশি।তবে গত চার দশকে অসাম্য আবার বেশ কিছুটা বেড়েছে, ইউরোপে তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে খুবই দ্রুত-১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি ১০ শতাংশ ধনীর হাতে ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পদ, এখন সেটা দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশ।সে জন্য তিনি ধনীদের ওপর অনুক্রমিক করারোপের পক্ষপাতী।