সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ নেই, কেনার চেয়ে মানুষ ভেঙেছে বেশি

সঞ্চয়পত্র
প্রতীকী ছবি

বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ নেই। এ সময়ে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। তবে ভাঙানো হয়েছে ৮৪ হাজার ১৫৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। অর্থাৎ, অর্থবছরের শুরু জুলাই থেকে গত জুন পযর্ন্ত নতুন বিনিয়োগের চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতাই বেশি ছিল।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ বছরে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর পরিমাণ ৩ হাজার ২৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেশি ছিল। মোট বিনিয়োগের তুলনায় ভাঙানোর পরিমাণ কম থাকলে যতটুকু কম, ততটুকুকেই নিট বিনিয়োগ বিবেচনা করা হয়। সে হিসাবে গত অর্থবছরে নিট বিনিয়োগ ছিল নেতিবাচক। তবে সরকারকে এ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪৪ হাজার ৭৯৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা কম ধরা হয়েছে ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনেক বেশি পরিমাণে বাড়ছিল। এতে সরকারের সুদ পরিশোধের ব্যয়ও অনেক বেশি বেড়ে যায়।

সঞ্চয়পত্রের উচ্চ মুনাফা বা সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ছে। এর ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপ করে আসছে সরকার। এগুলো হচ্ছে, সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে আয়কর রিটার্ন সনদ বাধ্যতামূলক করা, ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ২ শতাংশ কমানো, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা, মুনাফার ওপর উৎস করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা ইত্যাদি।

বাজেটের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা পরিশোধ বাবদ সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে, তাতে অন্য শর্তের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের ব্যাপারেও শর্ত রয়েছে।

আইএমএফ শর্ত দিয়েছে, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ এখন যা আছে, তা ২০২৬ সালের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে ফেলতে হবে। সঞ্চয়পত্রে মুনাফা বাবদ দেওয়া ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে আনতেই সংস্থাটি এ শর্ত দিয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো অফিস ও পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র প্রচলিত রয়েছে। ৫ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২, ৫ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬, ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ এবং ৩ বছর মেয়াদি ও ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।