বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা আছে। এ জন্য দরকার বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এ ছাড়া ব্যবসা শুরু করার যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময়সীমা, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও শুল্কহার কমাতে হবে।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে চলমান তিন দিনব্যাপী বে অব বেঙ্গল কনভার্সন বা বঙ্গোপসাগর সংলাপের দ্বিতীয় দিনে আজ রোববার সন্ধ্যায় বিনিয়োগবিষয়ক এক অধিবেশনে বক্তারা এ কথা বলেন। এ অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেওয়া বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, অবকাঠামো—এসব খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। সভায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানান বক্তারা। তাঁরা মনে করেন, সংস্কার হলে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আইনের শাসনই সবকিছু নিশ্চিত করতে পারে।
অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন তিন দিনের এ সংলাপের আয়োজক সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক পারভেজ করিম আব্বাসী।
দেশি উদ্যোক্তারা চান সংস্কার
দেশে–বিদেশি বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁর মতে, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তাই আমি বেশ আশাবাদী। কারণ, বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা আছে।’ কেন বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেশি, এ বিষয়ে তিনি তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেন। প্রথমত, প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। তাই শ্রমের অভাব নেই। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের পণ্যের বাজার উন্নত দেশগুলোয়। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে যা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার পণ্যের শুল্ক কমাবে, যা বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করবে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, দেশের ৯৫-৯৬ শতাংশ বিনিয়োগ স্থানীয়। বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যেতে পারছে না, যা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
একই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন। তাঁর মতে, ‘দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করতে হবে। বর্তমান সরকার বেশ কিছু খাতে সংস্কারের জন্য কমিশন ও কমিটি গঠন করেছে। তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন করার পর বিনিয়োগে সুফল মিলবে বলে আশা করছি।’ মীর নাসিরের মতে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি বিনিয়োগের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তলানির একটি দেশ। নেপাল, পাকিস্তানও বাংলাদেশের ওপরে আছে। তিনি মনে করেন, বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিপুল বিদেশি আসবে।
বিদ্যুৎসহ জ্বালানি খাতে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে পারেন বলে মনে করেন ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মুহাম্মদ আলমগীর। তাঁর মতে, দেশে বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ দেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুযোগ আছে। দরকার শুধু বিনিয়োগবান্ধব নীতি।
শাহ গ্রুপ ও টিএএস গ্রুপের চেয়ারম্যান কে এম মজিবুল হক বলেন, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে। ঢাকা ইপিজেডে যাওয়া আসায় চার ঘণ্টা সময় লাগে। মসৃণ যোগাযোগব্যবস্থার অভাব দেশে–বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বাধা।
শেল্টেক্ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। বিনিয়োগ না হওয়ার জন্য অনেক বাধা আছে। স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেশন ব্যবস্থা হলে এসব দুর্বলতা কেটে যাবে।
দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
তুরস্কের কে আই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাইল ইনান বলেন, যেকোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করার আগে দেখেন, ওই দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও ব্যবসা করার সমতল মাঠ। এসব দেখেই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি ও ওষুধ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে।
ইতালির ডিজেল কনসালটিংয়ের ব্যবস্থাপক লরা লারুচ্চিয়া বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারস্পরিক যোগাযোগ দরকার। প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগের কারণে এখন উদ্যোক্তারা বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে পারেন।
বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে যেকোনো পণ্য বিপণনের বিশাল ভূমি বাংলাদেশ, এমন মন্তব্য করেন বসনিয়া হার্জেগোভিনার কোয়ান্টাম গ্রোথ এজেন্সির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা সেলমা ওভারকেনিন। তিনি বলেন, আইসিটি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ নিতে পারেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।