খেলাপিদের ধরতে পদক্ষেপ নেই 

মইনুল ইসলাম
মইনুল ইসলাম

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণখেলাপি ও হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি প্রত্যাশা করেছিলাম; কিন্তু বাজেট বক্তব্য শুনে এ বিষয়ে হতাশ হতে হলো। কারণ, ঋণখেলাপি ও হুন্ডিব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোনো কথা বাজেটে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৮২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। তবে এটা প্রকৃত চিত্র নয়। বাস্তবে ব্যাংক খাতে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। 

খেলাপি ঋণ কমাতে হলে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে খেলাপি ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঋণগুলো কী অবস্থা তা–ও জানা যাবে না। এই প্রবণতা বাড়তে থাকবে। 

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটকে সংকোচনমূলক বাজেট বলতে হবে। বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কর-জিডিপির অনুপাত এবং জিডিপির অনুপাতে বাজেট–ঘাটতির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটি অর্জন করা কঠিন। যদি এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়, তা প্রশংসনীয় হবে।

 বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। যদিও তা এখন ৯ শতাংশের বেশি। সেখান থেকে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা কঠিন চ্যালেঞ্জ। আদৌ এই চ্যালেঞ্জ পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। 

এ ছাড়া বাজেটে কর জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে সেটিও প্রশংসনীয় হবে। কারণ, এখন কর-জিডিপির অনুপাতে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন অবস্থানে। বাজেটে যে ঘাটতি ধরা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত সেখানে রাখা গেল ভালো হবে। 

এবার বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ হতাশাজনক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মোট ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে গতবারের তুলনায় শিক্ষা খাতে ছয় হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ হলেও জিডিপির অনুপাতে তা কমেছে।

এমনিতেই জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের সবচেয়ে কম। এবার বরাদ্দ আরও কমেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি বেড়ে ২০১৬ সালে আড়াই শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। এখন তা কমে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশে নেমেছে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ পর্যালোচনা করে বলা যায়, এই সরকারের আমলে শিক্ষা খাত যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না। অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে শিক্ষা খাতে বরাদ্দও বাড়ানো উচিত।  

অর্থমন্ত্রী বাজেটে অনেক পণ্যে করভার বাড়ানো ও কমানোর প্রস্তাব করেছেন। তবে প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ আমদানি নিরুৎসাহিত করার দরকার ছিল। আমরা এখনো দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধে করভার না কমিয়ে দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে আরও বেশি উদ্যোগ দরকার ছিল। আবার সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ভর্তুকি দেওয়ার দরকার ছিল। এ জন্য সোলার প্যানেলসহ নানা উপকরণ আমদানিতে করভার কমানো যেত।;কিন্তু সেটি হয়নি, এটা খুবই হতাশাজনক। সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো গেলে বিদ্যুৎ খাতের অসুবিধাগুলো কমে আসবে। 


মইনুল ইসলাম: সাবেক অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়