বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আনার বহুল আলোচিত সুযোগটি বাতিল হচ্ছে। আগামী ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই বিষয়ে কোনো ঘোষণা নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবে ৩০ জুন শেষ হচ্ছে পাচারের টাকা ৭ শতাংশ কর দিয়ে দেশে আনার জন্য দেওয়া সুযোগের মেয়াদ।
চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় বিদেশে পাচার করা টাকা বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার সুযোগ নিয়ে। তখন এ সুযোগ দেওয়া নিয়ে বেশ সমালোচনাও হয়। অর্থনীতিবিদেরা বলেছিলেন, কেউ এ সুযোগ নেবে না। তাঁদের কথাই সত্য হতে চলেছে। কারণ, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে কেউ ৭ শতাংশ কর দিয়ে টাকা দেশে আনেননি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সুযোগটি দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, কেউ পাচার করা টাকা কর দিয়ে দেশে আনলে এনবিআরসহ অন্য কোনো সংস্থা এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে না। তখন নীতিনির্ধারকেরা আশা করেছিলেন যে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে অনেকেই টাকা দেশে ফেরত আনবেন। কিন্তু ‘পাচারকারী’ হিসেবে খাতায় নাম ওঠাননি কেউ।
বাজেটে সুযোগ দেওয়ার ফলে পাচারের অর্থ সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে দেশে আনা যায়। কিন্তু পাচারকারীরা এই সুযোগ না নিয়েও লাভবান হতে পারেন। যেমন কোনো পাচারকারী যদি মনে করেন, তিনি দেশে টাকা আনবেন, তাহলে রেমিট্যান্স হিসেবেও তা পাঠাতে পারেন। এতে কর তো দিতেই হবে না; বরং আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পাবেন।
সহজ করে বলা যায়, পাচার করা এক কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ দেশে আনলে সাত লাখ টাকা কর দিতে হবে। এর ওপর অর্থ ফেরত আনার তালিকা প্রকাশ হয়ে গেলেও সামাজিকভাবে মর্যাদাহানির আশঙ্কা আছে। অন্যদিকে ওই ব্যক্তি যদি এক কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠান, তাহলে এক কোটি আড়াই লাখ টাকা পাবেন।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত বিদেশ থেকে দেশে অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দিয়েছে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৭টি দেশ। এর মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ তেমন একটা সফল হয়নি।
এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাটের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে ৩০ জুন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ শেষ হচ্ছে।
তবে নতুন আয়কর আইনে জমি-ফ্ল্যাটে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার ধারা বহাল রাখা হতে পারে। আইনটি পাস হলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ মিলতে পারে। এ–সংক্রান্ত আইন অবশ্য এখনো হয়নি।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ২১ বার কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। ৫০ বছরের মধ্যে অন্তত ৪০ বছরই কোনো না কোনোভাবে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল ছাড়া আর কোনো সরকারের সময় কালোটাকা সাদা করায় খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি। সেই সময় সর্বোচ্চ ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছিল।