ডলার-সংকটের এই সময়ে ভোজ্যতেল, গম, চিনি, সার ও পশুখাদ্য আমদানিতে দেশের বেসরকারি খাতকে ঋণ নিশ্চয়তা দিতে চায় বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সংস্থা মাল্টিলেটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি (মিগা) এ সহায়তা দিতে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের জন্য তহবিল গঠনেও একই সহায়তা করতে চায় সংস্থাটি।
মিগা গত সপ্তাহে বাংলাদেশকে ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিশ্চয়তার প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে। চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মিগার খাদ্যনিরাপত্তা আমদানি সহায়তা কর্মসূচি (এফএসআইএফপি) থেকে দেওয়া সহায়তার পরিমাণ হতে পারে ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার পর্যন্ত। আর ঋণ নিশ্চয়তার অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন একটি তহবিলের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে সংস্থাটি।
তবে সুদের হার বেশি হওয়ায় এবং সহায়তার সময়টা স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় সরকার বিষয়টি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে এগোবে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রস্তাবটি এসেছে মূলত অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে। আমরা শুধু অনুলিপি পেয়েছি। যেহেতু খাদ্যপণ্য আমদানির বিষয়টি যুক্ত, তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের সঙ্গে এ নিয়ে এক দফা আলোচনা করেছি।
তবে সুদের হার লাইবরের চেয়ে তুলনামূলক বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে। এখন তো আর লাইবর নেই, আছে সোফর। সুদের হার নিয়ে তাই আলোচনার বিষয় আছে।’ সুদের হার চার শতাংশের মতো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আরও বেশি।’
লন্ডনের এক ব্যাংক আরেক ব্যাংককে যে সুদে ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে লন্ডন ইন্টারব্যাংক অফারড রেট বা লন্ডন আন্তব্যাংক সুদের হার (লাইবর)। গত বছরের জুনে তা উঠে গিয়ে এখন চালু রয়েছে সিকিউরড ওভার নাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর)।
দেশের অন্যতম ভোজ্যতেল আমদানিকারক টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তসলিম বলেন, ‘আমরা অনেক দিন থেকেই এটা হওয়ার ব্যাপারে কাজ করছিলাম। সম্প্রতি একটা বৈঠক করেছি।
মিগা থেকে প্রস্তাব এসেছে বলে শুনেছি। এটা হলে খুব ভালো হবে।’ সুদ হার ও বিভিন্ন শর্ত নিয়ে মিগার সঙ্গে দর-কষাকষি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মিগার প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখা যায়। এটি গ্রহণ করলে খাদ্যনিরাপত্তার জন্য যেমন ভালো হবে, আবার ডলার-সংকটের চাপও কমবে।’