দেশের চালের বাজারব্যবস্থাকে প্রতারণামূলক বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজারব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে। চালের বাজার পুরো প্রতারণামূলক। যে নামে চাল তৈরি হয়, তা ব্যাগের ভেতরে থাকে না। স্বর্ণা জাতের মোটা চালকে ছেঁটে চিকন করে পুষ্পমতি নামে বিক্রি করা হয়। যে জাতের চাল, সেই নামেই বিক্রি করতে হবে। চালের বাজারে প্রতারণা চলতে দেওয়া যায় না। এটা বন্ধ করা হবে।’
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আজ মঙ্গলবার ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) উন্নয়ন সংলাপে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিজেএফবি সভাপতি হামিদ-উদ-জামান। সঞ্চালনা করেন ডিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ। ডিজেএফবির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনে মোটা চাল ছেঁটে চিকন করা হচ্ছে। চালের প্রকৃত পুষ্টি চালের ওপরের স্তরে থাকে। কিন্তু তা ছেঁটে ফেলা দেওয়া হয়। এভাবে চলতে পারে না। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আইএমএফের ঋণের সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের কিছু কিছু জায়গায় দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো। ভর্তুকি কমাতে হতো। সংস্থাটি যে ঋণ দিয়েছে, তা আমাদের মোট জিডিপির তুলনায় খুবই কম। ফলে আইএমএফের ঋণের সঙ্গে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই।’
দেশে বৈষম্য কমছে দাবি করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বৈষম্য সব দেশেই বাড়ে। বৈষম্য কমাতে আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আড়াই কোটি মানুষকে সাহায্য দিয়েছি আমরা। বিনা মূল্যে বই দিয়েছি। ২০৪১ সালে জাদুঘরে কুঁড়েঘর রাখতে হবে। সবার হাতে মুঠোফোন, ঘরে কালার টিভি। কারোর পা খালি আছে? তার মানে হচ্ছে, বৈষম্য কমছে।’
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন উপকরণের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এর ফলে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল। তবে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মজুরির হারও বাড়ছে। গত জানুয়ারি মাসে মজুরির হার বেড়ে ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ হয়েছে, যা গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ মজুরি ভালোই বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি আগের অবস্থায় ফিরে যায় না।
দেশের আর্থিক অবস্থা প্রসঙ্গে শামসুল আলম বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। তাতে রিজার্ভও ইতিবাচক ধারায় আছে। অন্যদিকে পণ্য রপ্তানিতেও গত মাসে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। আমরা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছি। আবার আমদানি কমে গেলেও সমস্যা আছে। গত মাসে আমদানি বাড়তি থাকলেও তা খারাপ না। কারণ, অনেক পণ্য উৎপাদনের জন্য আমদানি জরুরি। যেমন তৈরি পোশাকশিল্প।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিজেএফবির সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক মফিজুল সাদিক, অর্থ সম্পাদক সাইদ রিপন, দপ্তর সম্পাদক এম আর মাসফি প্রমুখ।